উনুনে মৃত মাছ

প্রকাশিত: ৯:৩৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২২, ২০২৫

উনুনে মৃত মাছ

Manual6 Ad Code

আয়শা জাহান নূপুর |

আমাকে ভালোবেসে যে একদিন দীর্ঘ চিঠি লিখতো,
দেনার দায়ে সে আজ দেউলিয়া!
তাতেও তার কোন দুঃখ নেই!
দুঃখ হলো, এই দুর্মূল্যের বাজারে, দেউলিয়া হয়েও
সে যদি আমাকে আর একটা চিঠি লিখতে পারতো!

Manual2 Ad Code

আমাকে ভালোবেসে যে একদিন ঘর ছেড়েছিলো
সে এখন পুরদস্তুর একজন মিস্ত্রী।
তাতেও কোন দুঃখ নেই।
দুঃখ আমার একটাই,
পুড়ে পুড়েও যদি তার নিজের একখান ঘর হত!

Manual1 Ad Code

আমাকে মুগ্ধ করতে যে নিত্যনতুন সানগ্লাস কিনতো,
সে এখন শহরের বড় চশমার দোকানের মালিক।
যেখানে নিয়ম করে নামকরা ডাক্তাররা বসেন।
অথচ এখন সে আর চোখে দেখে না!
সবকিছুর বিনিময়ে সে যদি একবার আমাকে দেখতে পেত!

যে কিশোরকে ভালোবেসে আমার একলা কেটেছে জীবন
সে এখন বৃদ্ধ! শিশুর মতো বিছানায় গড়াগড়ি খায়!
পুরনো কোনকিছুই মনে নেই তার। তাকিয়ে থাকে কোথায়?
তোলপাড় হয় ভেতর বাহির –
আমাকে যদি সে একটিবার চিনতো!

#

এই কবিতার সারাংশ / সারমর্ম হলো—

Manual5 Ad Code

কবিতাটি এক ব্যর্থ কিন্তু গভীর ভালোবাসার দীর্ঘ সময়জুড়ে ক্ষয়, পরিবর্তন ও বেদনাকে তুলে ধরে। কবি দেখিয়েছেন, একসময় যে মানুষটি ভালোবাসার তাড়নায় চিঠি লিখত, ঘর ছাড়ত, শখ করত—জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে সে বাহ্যিকভাবে সফল বা প্রতিষ্ঠিত হলেও ভেতরে ভেতরে ক্রমশ নিঃস্ব হয়ে গেছে। দারিদ্র্য, শ্রমজীবন, ব্যবসায়িক সাফল্য, বার্ধক্য—সবকিছুর মধ্যেই তার সবচেয়ে বড় অভাব রয়ে গেছে ভালোবাসার মানুষটিকে আর একবার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।

অপরদিকে কবির দুঃখও বস্তুগত নয়; তার দুঃখ জন্ম নেয় অপূর্ণতা থেকে—চিঠি না পাওয়া, নিজের ঘর না হওয়া, চোখে দেখে প্রিয় মানুষকে না দেখতে পারা, স্মৃতিভ্রষ্ট বৃদ্ধের কাছে আর চিনে নেওয়া না হওয়া। শেষ পর্যন্ত সময় সবকিছু কেড়ে নেয়—যৌবন, স্মৃতি, স্বপ্ন—রয়ে যায় কেবল আক্ষেপ।
সার্বিকভাবে, কবিতাটি ভালোবাসার অপূর্ণতা, সময়ের নিষ্ঠুরতা, স্মৃতিহীন বার্ধক্য এবং মানুষের জীবনে আবেগগত দারিদ্র্যের গভীর ট্র্যাজেডিকে প্রতীকী ও বেদনাময় ভাষায় প্রকাশ করেছে।

Manual7 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ