সাধারণ মানুষই অর্থনীতি চালায়, ধনীরা নয়: অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রকাশিত: ১২:৩১ অপরাহ্ণ, মে ১৪, ২০২০

সাধারণ মানুষই অর্থনীতি চালায়, ধনীরা নয়: অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

Manual3 Ad Code

পশ্চিমবঙ্গ (ভারত), ১৪ মে ২০২০ : নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, দরিদ্র মানুষজনের হাতে এখন অর্থ নেই। সে জন্য তাঁদের ক্রয়ক্ষমতা একেবারেই দুর্বল। এসব সাধারণ মানুষের হাতে অর্থ পৌঁছানো উচিত সরকারের। কারণ তারাই অর্থনীতি চালায়, ধনীরা নয়।

Manual6 Ad Code

এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, তিন থেকে ছয় মাসে ধাপে ধাপে গরিব মানুষের হাতে অর্থ পৌঁছানো উচিত। আর তারা যদি ওই অর্থ ব্যয় না-ও করে, সেটি কোনো সমস্যা নয়।
অভিজিৎ বলেন, ‌‘করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় ভারত ইতিমধ্যে ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন রুপি বা ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি রুপির ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা করলেও তা কিন্তু মোট দেশজ উৎপাদনের মাত্র ১ শতাংশেরও কম। আমাদের ত্রাণ সহায়তায় জিডিপির অনুপাতে আরও বেশি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা উচিত।’ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের টিভি চ্যানেল ‘এবিপি আনন্দ’-এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’-এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

Manual6 Ad Code

অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরিস্থিতিতে ভারতের ঘোষিত ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি রুপির ত্রাণ প্যাকেজটি জিডিপির ১ শতাংশেরও কম, যা আরও বাড়ানো উচিত। কারণ ভারতে মানুষের প্রধান সমস্যা হলো তাদের ক্রয়ক্ষমতা বেশি নয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপানের মতো দেশগুলো ত্রাণ সহায়তায় যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে, তা জিডিপির অনুপাতে অনেক ভালো।
২০১৯ সালে স্ত্রী এস্থার দুফলোর সঙ্গে অর্থনীতিতে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কারজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে বিনিয়োগ-ব্যবসায় স্থানান্তর শুরু হবে। তবে এই সুযোগ ভারত নিতে পারে কি না, সেটি আমি নিশ্চিত নই।’

অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় কোভিড-১৯ মোকাবিলায় একটি রোডম্যাপ তৈরির লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের গঠিত বৈশ্বিক উপদেষ্টা পর্ষদেরও একজন সদস্য। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে চীন থেকে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া শুরু হলে ভারত সেই সুযোগ নিতে পারে কি না, তা নিশ্চিত নয়।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‌‘চীন থেকে কোভিড-১৯ ভাইরাস শুরু হয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণে সেই দেশের বিরুদ্ধে সবাই অভিযোগ তুলছেন। মানুষ বলছেন, চীন থেকে ব্যবসায় স্থানান্তর শুরু হলে তা ভারতে আসতে পারে। কিন্তু এই ধারণা সত্য নয়।’
নিজের বক্তব্যের সমর্থনে অভিজিতের যুক্তি হলো, ‌‘চীন তার মুদ্রা ইউয়ানের বিনিময় হার কমায় কি না, সেটিও একটি বিবেচ্য। ইউয়ানের বিনিময় হার কমানো হলে চীনা পণ্যে দাম কম পড়বে। তখন মানুষ সস্তায় চীনা পণ্য কিনবে।’
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার বা অভিবাসী শ্রমিকদের (এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে যাঁরা কাজ করেন) দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, ‌‘তাঁরা কী রকম সমস্যার মুখে পড়তে পারেন, তা আমরা চিন্তা করিনি। তাঁদের কোনো আশ্রয় নেই, পকেটও পুরো খালি। এই অবস্থায় তাঁদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে তিন কি ছয় মাসের রেশন কার্ড চালু করা উচিত।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় ভারতজুড়ে জারি করা লকডাউন বা অবরুদ্ধ অবস্থা নিয়েও কথা বলেন অভিজিৎ। তিনি বলেন, লকডাউন দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে। এতে জনগণকে করোনা সম্পর্কে সচেতন করে তোলার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরতে বলা হয়েছে। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কীভাবে অর্থনীতি পরিচালনা করতে হবে, সেই পর্যায়ের সচেতনতা তৈরি হয়নি।
এদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলা করে আগামী দিনে আত্মনির্ভর ভারত গঠনের উদ্দেশ্যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০ লাখ কোটি রুপির আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। আকারের দিক থেকে এই অর্থ ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপির) ১০ শতাংশের সমান। গত সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এই প্যাকেজ ঘোষণা করেন তিনি।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, নতুন আর্থিক প্যাকেজে কৃষিশ্রমিক, মৎস্যজীবী, মধ্যবিত্ত, শিল্পপতি সবার জন্যই এমন কিছু থাকবে, যা আগামী দিনে ভারতকে আত্মনির্ভর করে তুলবে।
মোদি তাঁর ভাষণে বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‌‘লোকালের (দেশি) জন্য ভোকাল হতে হবে।’
আজ দুপুর পর্যন্ত ভারতে করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ২৮১ জন, মারা গেছে ২ হাজার ৪১৫ জন।

Manual3 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code