সিলেট ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:১০ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০২৫
কূটনৈতিক প্রতিবেদক | নিস শহর (ফ্রান্স), ১০ জুন ২০২৫ : গভীর সমুদ্রের খনিজ আহরণ নিয়ে সুশৃঙ্খল নীতিমালার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসাগর সম্মেলনে বিশ্বনেতারা।
দক্ষিণ ফ্রান্সের নিস শহরে এ সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এককভাবে আন্তর্জাতিক জলসীমায় খনিজ আহরণের উদ্যোগ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
ফ্রান্সের নিস থেকে এএফপি জানায়, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, ‘যেহেতু আমরা সমুদ্র তলদেশের বিষয়ে কিছুই জানি না, সেহেতু এমন লোভাতুর অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে তার জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা এবং অনির্বচনীয় কার্বন-সিঙ্ক মুক্ত করে দেওয়া নিছক পাগলামো।’ তিনি গভীর সমুদ্র খননের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাকে ‘আন্তর্জাতিক প্রয়োজন’ হিসেবে অভিহিত করেন।
ডিপ সি কনজারভেশন কোয়ালিশনের হিসাব অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত ৩৬টি দেশ গভীর সমুদ্র থেকে খনিজ আহরণের বিরোধিতা করেছে।
যদিও সম্মেলনে ট্রাম্প উপস্থিত ছিলেন না, তবুও তার ‘একতরফা’ পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বনেতারা বহুপক্ষীয় বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান নেন।
ট্রাম্প সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সমুদ্র তলদেশ কর্তৃপক্ষ (আইএসএ)-কে পাশ কাটিয়ে নিজ দেশের বাইরে অবস্থিত জলসীমায় খনিজ আহরণের জন্য বিভিন্ন কোম্পানিকে সরাসরি লাইসেন্স প্রদান শুরু করেছেন।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বলেন, ‘আমরা গভীর সমুদ্রের খনিজ আহরণে এক ধরনের মারাত্মক প্রতিযোগিতা প্রত্যক্ষ করছি। এই অনিয়ন্ত্রিত দৌড় বন্ধে আইএসএকে এখনই সুস্পষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, তা যেন সমুদ্রের ক্ষেত্রেও না ঘটে।’
মাখোঁ বলেন, ‘গভীর সমুদ্র, গ্রিনল্যান্ড এবং আন্টার্কটিকা বিক্রির বস্তু নয়।’ এই মন্তব্যে ট্রাম্পের সম্প্রসারণবাদী নীতিকেই ইঙ্গিত করা হয়।
আইএসএ আগামী জুলাই মাসে সমুদ্রের তলদেশে খনন সংক্রান্ত একটি বৈশ্বিক খননবিধি চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, তিনি এসব আলোচনাকে সমর্থন করেন এবং নতুন এই খাতের বিষয়ে ‘সতর্কতার’ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘গভীর সমুদ্র যেন ‘বুনো পশ্চিম’ বা অরাজক অঞ্চলে পরিণত না হয়।’ এতে সম্মেলন কক্ষে জোর করতালির রোল ওঠে।
-‘আশার জোয়ার’-
ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোও গভীর সমুদ্র খননের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, এই খনন কার্যক্রম বৃহৎ অনাবিষ্কৃত সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে, সোমবার নিস সম্মেলনে একঝাঁক নতুন স্বাক্ষরের ফলে আন্তর্জাতিক জলসীমার ৬০ শতাংশ রক্ষা বিষয়ক চুক্তি (হাই সি ট্রিটি) কার্যকর হওয়ার আরও কাছাকাছি চলে এসেছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানান, ৫৫টি দেশ ইতোমধ্যে চুক্তিটি অনুসমর্থন করেছে। কার্যকর হতে এখন বাকি মাত্র পাঁচটি অনুসমর্থন।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, সোমবার একদিনেই ১৮টি নতুন অনুসমর্থন জমা পড়ে, যার ফলে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০। কয়েক দিনের মধ্যেই আরও অনুসমর্থন আসতে পারে।
‘হাই সিজ অ্যালায়েন্স’-এর পরিচালক রেবেকা হাবার্ড বলেন, ‘আজকের অনুসমর্থনের ঢল এক বিশাল আশার জোয়ার। উদযাপনের বড় কারণ।’
‘প্রমাণ করুন, আপনারা সত্যিই সমুদ্র রক্ষা করতে চান’
ইতোমধ্যে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য তাদের নিজ নিজ সুরক্ষিত সামুদ্রিক অঞ্চলে বটম ট্রলিং (সমুদ্র তলদেশে জাল ফেলে মাছ ধরা) নিষিদ্ধ করেছে।
সোমবার গ্রিস, ব্রাজিল ও স্পেন নতুন সামুদ্রিক পার্ক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। সামোয়াও সম্প্রতি এমন ঘোষণা দিয়েছে।
এছাড়া, ফরাসি পলিনেশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম সামুদ্রিক সংরক্ষিত অঞ্চল গঠনের ঘোষণা দেয়, জানিয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার’।
বর্তমানে বৈশ্বিক সমুদ্রের মাত্র ৮ শতাংশ সংরক্ষিত। অথচ বৈশ্বিক লক্ষ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ শতাংশে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘শুক্রবার এই সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই আমরা সংরক্ষিত অঞ্চল ১২ শতাংশে নিতে চাই।’
তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন, সংরক্ষিত অঞ্চলগুলো তখনই কার্যকর হবে, যদি সেখানে বটম ট্রলিংসহ অন্যান্য ক্ষতিকর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয় এবং যথাযথ অর্থায়ন নিশ্চিত করা হয়।
নিস সম্মেলনে ধনী দেশগুলোর ওপর এই অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার চাপ রয়েছে।
নিম্নভূমি দ্বীপরাষ্ট্র পালাউয়ের প্রেসিডেন্ট সুরাঙ্গেল হুইপস জুনিয়র বলেন, ‘আপনারা সত্যিই সমুদ্র রক্ষা করতে চাইলে তা প্রমাণ করুন।’
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি