গর্বাচভের মৃত্যু: একজন কমিউনিস্টের প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫

গর্বাচভের মৃত্যু: একজন কমিউনিস্টের প্রতিক্রিয়া

Manual3 Ad Code

ডা. মনোজ দাশ |

কমরেড স্তালিনের মৃত্যুর পর থেকে আশির দশক পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নে অনেক কালো টাকার মালিক তৈরি হয়। এই কালো টাকা বিনিয়োগের কোনো সুযোগ ছিল না তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়নে। আশির দশকে এই কালো টাকার মালিকেরা শ্রেণি হিসেবে সংগঠিত হয়ে তৎপর হয়ে ওঠে পুঁজিবাদে প্রত্যাবর্তনের জন্য। গর্বাচভ ছিলেন তাদেরই প্রতিনিধি।

Manual2 Ad Code

মার্কসবাদ-লেনিনবাদের মৌলিক চিন্তার বিরোধী এমন একজন গর্বাচভের মৃত্যুতে একজন কমিউনিস্ট হিসেবে আমি বিন্দুমাত্র ব্যথিত নই।
কিন্তু গর্বাচভের মৃত্যু আমাকে পেছন ফিরে তাকাতে বাধ্য করছে। কিভাবে ইতিহাসের একজন খলনায়ক সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ে ভূমিকা রেখেছে, নব নব ধারার সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে নতুন প্রজন্মের কমিউনিস্টদের তা জানা দরকার।

১৯৮৫ সালে গর্বাচভ ক্ষমতায় আসেন। সবাইকে বিভ্রান্ত করার জন্য শুরুতেই তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলেন- ‘আমরা অবশ্যই সোভিয়েত ক্ষমতাকে পরিবর্তন করতে যাচ্ছি না অথবা তার মূলনীতি পরিবর্তন করতে যাচ্ছি না। আমরা সমাজতন্ত্রকে আরও গতিশীল ও অর্থপূর্ণ করতে চাই।’

২৭তম কংগ্রেস পর্যন্ত তিনি কথার মায়াজালে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সারা দুনিয়ার অসংখ্য কমিউনিস্টকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেন এবং এই প্রক্রিয়ায় তাদের প্রতারিত করতে সমর্থ হন।

নিজের ক্ষমতা সংহত হওয়ার পর গর্বাচভ তার মুখোশ খুলতে শুরু করেন ১৯৮৭ সালে অক্টোবর বিপ্লবের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার বক্তৃতার মধ্য দিয়ে। মার্কসবাদবিরোধী নিম্নলিখিত ৩টি তত্ত্ব তিনি সামনে নিয়ে আসেন-
(১) অখণ্ড বিশ্ব তত্ত্ব, (২) সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে নতুন তত্ত্ব ও (৩) দ্বন্দ্বের পরিবর্তন তত্ত্ব।
গর্বাচভ তার এসব তত্ত্বে দাবি করেন-
দ্বন্দ্বের পরিবর্তন হয়েছে। পৃথিবীকে পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তিতে পৃথক করে দেখার আর প্রয়োজন নেই।

শ্রেণি পার্থক্য তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে।
এজন্য গর্বাচভ শ্রেণি সংগ্রামের তত্ত্ব বাতিল করে নছিহত প্রদান করলেন, ব্যক্তি-সমাজ সবকিছুকে বিচার করতে হবে শ্রেণি-নিরপেক্ষ সার্বজনীন মানবিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিয়ে। গর্বাচভ বললেল, শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে কোনো কিছুকে বিচার করার দিনের অবসান হয়েছে। গর্বাচভের এসব বাণী এখনো আমাদের আশেপাশেই খুঁজে পাবেন।

গর্বাচভ তার তত্ত্বে ঘোষণা করলেন- ‘সাম্রাজ্যবাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের সাথে আমাদের কোনো ‘বৈরি’ বিরোধ নেই।’

গর্বাচভ আরও দাবি করলেন, আন্তর্জাতিক পরিসরে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে ভূমিকা গ্রহণ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধিতা এসব কিছু তার প্রাসঙ্গিতা হারিয়েছে। প্রলেতারীয় আন্তর্জাতিকতার আর প্রয়োজন নেই।

Manual7 Ad Code

তিনি এই বক্তব্য দিতেও দ্বিধা করেলন না, ‘রাষ্ট্র ও সমাজে শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের আধিপত্যের ধারণা আজকের দুনিয়াতে আর প্রয়োজন নেই।’

Manual6 Ad Code

১৯৮৮ সালে তিনি তার পয়গম্বরসূলভ বাণীতে আমাদের জানালেল, সমাজতন্ত্রে এমন ধরনের ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তিও থাকতে পারবে যার মধ্যে মজুরী-শ্রমও থাকবে। সমাজতন্ত্রকে এভাবে চিত্রিত করে তিনি সমাজতন্ত্রকেই নাকচ করে দিলেন।

১৯৮৯ সালে গর্বাচভ যৌথ কৃষিফার্ম ভেঙ্গে দিয়ে ব্যক্তমালিকানায় ফিরিয়ে আনেন।

১৯৯১ সালে মিশ্র অর্থনীতির নামে রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনহীন পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতি চালু করেন।

Manual7 Ad Code

কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়।
এভাবে পুঁজিবাদ- সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে গর্বাচভ ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে ফেলার সব শর্তই পরিপক্ক করে তোলায় নেতৃত্ব প্রদান করেন।

আজ থেকে তিন বছর পূর্বে ২০২২ সালে গর্বাচভের মৃত্যুতে আমার মতো একজন অখ্যাত কমিউনিস্ট শুধু তার ও পুঁজিবাদের প্রতি ঘৃণাই নিক্ষেপ করছে না, সব ধরনের সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সপথও ব্যক্ত করছে।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code