সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামানের জীবনাবসান

প্রকাশিত: ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০২০

সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামানের জীবনাবসান

Manual1 Ad Code

নিজস্ব সংবাদদাতা || ঢাকা, ২৫ নভেম্বর ২০২০ : দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান আর নেই। মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ৭টা ২০ মিনিটে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে খন্দকার মুনীরুজ্জামান মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ২১ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। কোভিড-১৯ থেকে মুক্ত হলেও পরবর্তীতে নানা শারীরিক জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

খন্দকার মুনীরুজ্জামান ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী, আপসহীন, নীতিবান, আদর্শ সাংবাদিক, নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভীক সাংবাদিকতার পথিকৃত। গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তার লেখনি ছিল ক্ষুরধার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতিশীল চিন্তা ও গণতন্ত্রের বিকাশে তিনি ছিলেন অবিচল। দেশের প্রতিটি প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অসামান্য অবদান রাখা এই সাংবাদিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। স্বাধীন সাংবাদিকতার বিকাশ ও রক্ষায় এবং গণমাধ্যমকে গণমানুষের দর্পণে পরিণত করতে খন্দকার মুনীরুজ্জামানের অবদান অনস্বীকার্য।

Manual4 Ad Code

খন্দকার মুনীরুজ্জামানের মৃত্যুতে ওয়ার্কার্স পার্টির শোক

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

Manual8 Ad Code

আজ এক শোক বার্তায় বলেন, খন্দকার মুনীরুজ্জামান ছিলেন কমিউনিষ্ট পাটির ঢাকা জেলা কমিটির সম্পাদক। তিনি বাম ধারার ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছিলেন।

সাংবাদিক হিসেবে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন। দৈনিক সংবাদে তিনি এক সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। পরে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নিযুক্ত হন। তাঁর মৃত্যু এদেশের প্রগতিশীল সাংবাদিকতার অপূরনীয় ক্ষতি।

খন্দকার মুনীরুজ্জামান ১৯৪৮ সালের ১২ মার্চ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ডন স্কুলে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি। সেখান থেকে মুসলিম বয়েজ স্কুলে পড়েছেন দু’বছর। এরপর ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৬৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ঢাকা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট, জগন্নাথ কলেজ থেকে সয়েল সায়েন্সে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে এমএ ভর্তি হয়ে অধ্যয়ন শুরু করলেও নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত পরীক্ষা দেয়া হয়নি।

মুনীরুজ্জামান ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার সময় ১৯৬৩ সালের নভেম্বর মাসে জগন্নাথ কলেজ ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ’৬৫ সালে গোপন কর্মী হিসেবে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। ’৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থানে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। ’৭০-এর দিকে শ্রমিক আন্দোলনে যোগদান করেন। একাত্তরে ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টির সম্মিলিত বিশেষ গেরিলা বাহিনীর প্রথম ব্যাচে আসামের তেজপুরে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। আগরতলায় পার্টির একটি মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের ‘ইনচার্জ’ ছিলেন। তিনি যুদ্ধকালীন পূর্ব বাংলায় প্রবেশ করে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। স্বাধীনতার পর তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। নব্বই’র দশকের শুরুতে তিনি ঢাকা মহানগর কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র সাপ্তাহিক একতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে ’৯০-এর দশকে সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে যোগদান করেন। পরে রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী কলাম লেখক হিসেবে তিনি পরিচিতি পান। ১৯৯৬ সালের ১৪ মে তিনি দৈনিক সংবাদে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন এবং আমৃত্যু এই দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৯ সালে মুনীরুজ্জামান প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। তিনি দীর্ঘদিন কমিউনিস্ট পার্টির ঢাকা জেলা কমিটির সম্পাদক ছিলেন।

খন্দকার মুনীরুজ্জামানের স্ত্রী ডা. রোকেয়া খাতুন (রেখা) স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপপরিচালক (অব.)। তার একমাত্র ছেলে ডা. ইশতিয়াক আলম সঞ্জু সলিমুল্ল্যাহ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি) হিসেবে কর্মরত আছেন। পুত্রবধূ ডা. ফারজানা হক (পর্ণা) মৌলভীবাজার আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট, গাইনি (ইনচার্জ)। এই দম্পতির সন্তান অরিত্র খন্দকার মুনীরুজ্জামানের একমাত্র দৌহিত্র।

Manual8 Ad Code

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী খন্দকার মুনীরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া মন্ত্রিসভার সদস্য, জাতীয় সংসদের সদস্য, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠন, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, ঐক্য ন্যাপসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ভারতীয় হাইকমিশন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), জাতীয় প্রেসক্লাব এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)সহ পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠনের নেতা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা খন্দকার মুনীরুজ্জামানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

সৈয়দ অামিরুজ্জামানের শোক

Manual6 Ad Code

সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ অামিরুজ্জামান।
খন্দকার মুনীরুজ্জামান মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক তাপস কুমার ঘোষ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সভাপতি দেওয়ান মাসুকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন এবং শ্রীমঙ্গল পৌর শাখার সভাপতি শেখ জুয়েল রানা ও সাধারণ সম্পাদক রোহেল অাহমদ।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর পল্টন জামে মসজিদে বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার মুনীরুজ্জামানের প্রথম জানাজা শেষে বিকেলে মরহুমের লাশ জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে নেয়ার পর সাংবাদিকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা (গার্ড অব অনার) প্রদান করেন পুলিশের একটি চৌকস দল। বিকেলে তার লাশ মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নেয়া হয় এবং সেখানেই দাফনের মধ্যদিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হন আপসহীন সাংবাদিক খন্দকার মুনীরুজ্জামান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code