সিলেট ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:৪৯ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৯, ২০২০
|| রাহমান চৌধুরী || ০৯ জুলাই ২০২০ : নারায়ণ সাহা কয়েকদিন অাগে ইনবক্সে অামাকে একটা প্রশ্ন করেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নজরুল ইসলাম কেন ক্ষুদিরাম বসু বা সূর্য সেনকে নিয়ে কিছু লিখলেন না? বিষয়টা নিয়ে কখনো পূর্বে নিজেও ভাবিনি। প্রথম কথা হলো, মানুষ সবকিছু নিয়ে লিখবার কথা ভাবে না। লিখবার কথাও না। কখনো কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে অাবার বহু বিষয় নিয়ে লেখেন না। কিন্তু না লিখবার কিছু কারণ নিয়ে তবুও কথা বলা যায়। রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের যে ক্ষুদিরাম অার সূর্য সেনকে নিয়ে সেগুলিই সত্যিকারভাবে না লিখবার সঠিক কারণ এমনটা নাও হতে পারে। তবে এটা একটা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেয়া। গ্রহণযোগ্য কারণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া নয়। নারায়ণ সাহা প্রশ্নটি করেছিলেন দিন তিনেক অাগে, এ প্রশ্নের উত্তর দিতে যে দেরি করলাম, তার কারণ সে যখন প্রশ্নটি করে তখন কয়েকদিন অামি ঢাকার বাইরে নবাবগঞ্জে রয়েছি অামার বন্ধু হুমায়ূন কবীর হিমুর গ্রামে। সেখানে দুদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদু্ৎ ছিল না। ফলে এ নিয়ে লিখবার সুযোগ ছিল না।
ক্ষুদিরামের যখন ফাঁসি হয়, নজরুল ইসলামের বয়স তখন নয় দশ বছর হবে, ফলে না লিখবার কারণটি বোঝা যায়। তিনি তখন এ নিয়ে লিখবার মতো লেখক ছিলেন না। যখন তিনি লেখক হন, তখন লিখবার মতো বহু বিষয় ছিল। ক্ষুদিরামের প্রাণ দেয়া তখন তাৎক্ষণিক উত্তেজনার বিষয় অার ছিল না। ইতিমধ্যে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথের তখন পরিণত বয়স, কিন্তু তিনিও লেখেননি। রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তিগত বিশ্বাস করতেন, ক্ষুদিরাম ভারতের স্বাধীনতার জন্য সন্ত্রাসবাদের যে পথে স্বাধীনতা অাসবে না বা তা সুফল বয়ে অানবে না। রবীন্দ্রনাথ বরং মনে করতেন, ক্ষুদিরামের মতো কিশোরদের এভাবে বিপথগামী করা হয়। রবীন্দ্রনাথের “ঘরে বাইরে” উপন্যাস পাঠ করলে সে ধারণা স্পষ্ট হবে। তিনি ক্ষুদিরামদের পথের সমর্থক ছিলেন না। রবীন্দ্রনাথ কিন্তু যাঁরা সন্ত্রাসবাদের পথে ভারতের স্বাধীনতা অানতে চেয়েছেন, তাঁদের ত্যাগ তিতিক্ষাকে কখনো গান্ধীর মতো অসম্মান করেননি। তিনি গান্ধীর অহিংসার পথেও বিশ্বাসী ছিলেন না। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ এসব শহীদদের প্রতি সম্মান দেখাতে কার্পণ্য করেননি।
খুব সহজে তাহলে এ ধারণাও করা যায়, রবীন্দ্রনাথ কেন সূর্যসেনকে কিছু লেখেননি। কারণ এ ধরনের মতবাদে তাঁর অাস্থা ছিল না। নজরুল ইসলামের তখন পরিণত বয়স, তিনি তাহলে সূর্য সেনকে নিয়ে লিখলেন না কেন? কারণ হলো, নজরুল ইসলাম তখন সাম্যবাদী মতবাদে বিশ্বাসী। ভারতের সাম্যবাদীরা তখন অার খণ্ডিতভাবে সন্ত্রাসবাদী পথে যে স্বাধীনতা অাসবে সেরকম ধারণায় বিশ্বাসী নয়। তখন রুশ দেশের মতো জনগণের বিপ্লবের দ্বারা তাঁরা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অাগ্রহী। বহু সন্ত্রাসবাদী তখন কারাগারে বসে সমাজতন্ত্রী মতবাদে বিশ্বাসী হন। সন্ত্রাসবাদের পথ ছেড়ে দেন। বহুজন পরবর্তী সময় তাঁদের সন্ত্রাসবাদের পথ সঠিক ছিল না বলে স্বীকার করে নেন। গান্ধী একমাত্র নিজের অহিংস মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করেছেন। গান্ধী শহীদদের প্রতি সম্মান পর্যন্ত দেখাননি। ভগৎ সিংহের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াননি। গান্ধীর মতো অার কেউ সন্ত্রাসবাদী দেশপ্রেমিকদের বা শহীদদেরকে অসম্মান করে কথা বলেননি।
রুশ বিপ্লবের নেতা ভ্লাদিমির লেনিন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন, কিন্তু গান্ধীর মতো সশস্ত্র বিপ্লবের বিরুদ্ধে ছিলেন না। রুশ দেশের সন্ত্রাসবাদী দল নারদনিক নামে পরিচিত। লেনিনের বড় ভাই জারকে উৎখাত করতে গিয়ে সে দলের হয়ে সন্ত্রাস করে ফাঁসিতে ঝুলেছিলেন যখন লেনিন ছোট। ভাইয়ের প্রাণদানের প্রতি লেনিনের পুরো সম্মান ছিল, কিন্তু সন্ত্রাসবাদ যে বিপ্লবের পথ নয়, বরং বিপ্লবের বিরোধি তা বারবার উচ্চকণ্ঠে বলে গেছেন। তিনি কঠোরভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু সন্ত্রাসবাদের পথে যাঁরা প্রাণদান করেছেন তাঁদের মহত্তকে খাটো করে দেখাননি। রবীন্দ্রনাথ সন্ত্রসবাদীদের সঙ্গে থাকেননি অার একটি কারণে। যখন তিনি দেখলেন, বাংলার মুসলমানদের বাদ দিয়ে সন্ত্রাসবাদী অান্দোলন হিন্দু জাতীয়তাবাদের ধারক হয়েছে। তিনি সেটাকে একেবারে সমর্থন করেননি। রবীন্দ্রনাথের লেখা কালান্তর বা অন্যান্য প্রবন্ধে তা পাওয়া যাবে।
নারায়ণ সাহার অবশ্য অার একটি প্রশ্ন রয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে নিয়ে। পরে কখনো সময় নিয়ে তার জবাব দেবো।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D