সিলেট ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৪৮ অপরাহ্ণ, জুন ২, ২০২৫
আমি খেয়াল করেছি আমাদের দেশে অনেকের কাছেই বুকের ওড়না শালীন পোশাকের একটি পূর্বশর্ত। বাকি অংশের পোশাক যেমনই হোক না কেন—কিছু ঢাকার মতো থাকুক বা না থাকুক —শাড়ি ছাড়া অন্য পোশাকে বুকে একটা ওড়না না থাকলে অনেকের চোখেই সেটা অশালীন লাগে।
ছোটবেলায় আমরা এক বছর চায়নায় ছিলাম। আমার তখন চৌদ্দ বছর বয়স। সেখানে গিয়ে সেখানকার আবহাওয়ার উপযোগী কিছু পোশাক পরা হয়েছিল—মূলত ফুলহাতা ঢিলা শার্ট বা টপস আর জিন্স। আমার কাছে তখন সেই পোশাকগুলো খুবই আরামদায়ক, সহজ এবং শালীন মনে হয়েছিল। তাই দেশে ফিরে এসে এক-দু’বার পরার চেষ্টা করেছিলাম। তখন এমন ‘বেহায়া’ ধরনের পোশাক পরা দেখে অনেকেই অবাক হয়েছিল। কেউ আমাকে কটাক্ষ করার জন্য না, সত্যিই তাদের চোখে পোশাকটা অশালীন লেগেছিল। আমারও আর পরা হয়নি।
তবে আমি খেয়াল করেছিলাম, যাদের চোখে এই পোশাক অশালীন লেগেছিল, তাদের অনেকেই সামনে-পেছনে বড় গলার ব্লাউজ আর পাতলা শাড়ি নিয়মিত পরে থাকে। আমার মনে হয়েছিল, যেহেতু শাড়ি আমাদের চোখে অভ্যস্ত, তাই সেটাই আমাদের কাছে স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সময় আমার পরিচিত মহলে শার্ট-জিন্সের চল তেমন না থাকায়—যদিও পোশাকটা শাড়ির তুলনায় অনেক বেশি আবৃত—তবু তা অনেকের চোখে অশালীন।
দুদিন আগে আমার আর আমার ভাইয়ের একটা ছবি পোস্ট করেছিলাম। অনেক ভালো ভালো কমেন্টের ভিড়ে মাত্র দুটো কমেন্ট চোখে পড়লো—একজন বলেছে: “এত কথা বলার আগে বুকে ওড়না দেন।” আরেকজন এরকম লিখেছে: “কথাবার্তা তো সুন্দর লিখেছেন, কিন্তু পোশাকের এই অবস্থা কেন? এত অশালীন?”
যে দুজন কমেন্ট করেছে, তাদের কাউকেই আমি চিনি না। ওনাদের সঙ্গে আমার কোনো রেষারেষিও নেই। আমার পোশাক তাদের চোখে অশালীন মনে হওয়াতেই তারা মন্তব্য করেছে। আমার চারপাশের পরিচিত মানুষরা উঠতে বসতে কত মানুষ সম্পর্কে কত মন্তব্য করে, আমরাও করি। কাজেই দু’জনের এ রকম মন্তব্যে ব্যক্তিগতভাবে আহত হবার কিছু নেই।
তবু এই নিয়ে পোস্ট করার কারণ—বুকের ওড়না সম্পর্কে একটু আলোচনা করা।
আমার প্রবাসজীবনে আমি এখন বেশিরভাগ সময়ই ওয়েস্টার্ন পোশাক পরি। আমার শারীরিক গঠনের কারণে আমি ওড়না পরার প্রয়োজন বোধ করি না। পাশাপাশি, বিভিন্ন দেশের হিজাব পরা মুসলিম নারীদের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়েছে। অনেকের হিজাবের কাপড় বুক পর্যন্ত নামে না। আলাদা করে ওরনা পরার ধারণাটাও তাদের মধ্যে নেই। তারপরও তাদের পোশাক যথেষ্ট শালীন এবং পরিপাটি।
কিন্তু যেহেতু বারবার—একবার না, একাধিকবার—আমার ছবিতে এই ওড়নার প্রসঙ্গ তোলা হয় (যদিও এক-দুজনের দ্বারাই), তাই আমার প্রশ্ন হচ্ছে—এটা কি আসলে শালীনতার প্রশ্ন, নাকি আমাদের চোখের অভ্যস্ততার প্রশ্ন?
ব্যক্তিগতভাবে, অন্যের পোশাক আমাকে সাধারণত বিচলিত করে না। একবার স্পেনের এক বিচে সম্পূর্ণ নগ্ন মানুষদের নির্বিকার হাঁটাচলা দেখে আমি যারপরনাই অস্বস্তিতে পড়ে সেখান থেকে সরে এসেছিলাম। কেননা আমার চোখ এতে অভ্যস্ত না এবং অভ্যস্ত হতে চায়ও না। আমার মনে হয়েছিল, ওটা আমার জায়গা না। কিন্তু “অন্যেরা কেন এমন করে”—এই প্রশ্ন মাথায় আসলে আমি সেটাকে ভুল চিন্তা বলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কেননা সেই চিন্তা আমার না।
সত্যি বলতে কী, শুধু পোশাক না—অন্যের কোনো কার্যকলাপ যা আমার, অন্যের, বা সমাজের কোনো ক্ষতি করছে না, তা আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা অভ্যাসের ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত হলেও, আমাকে মোটেও বিচলিত করে না। এই মধ্যবয়সে এসে এটুকু বুঝেছি— আমার এই ধরনের ভাবনা ভুল হোক বা সঠিক হোক আর যাই হোক, খুব কম মানুষই আমার মতো এভাবে ভাবে।
তাই আমার এই পোস্টটা ‘অন্যের পোশাক নিয়ে মন্তব্য করা উচিত কি উচিত না’—এই সম্পর্কিত না। আমি সত্যিই জানতে চাই, তাদের অভিমত, যারা হয়তো ওড়না ছাড়া কাউকে দেখলে অস্বস্তি বোধ করে।
প্রশ্নটা হল—এই অস্বস্তিটা কি আমাদের কালচারাল অভ্যস্ততা থেকে আসা, নাকি বিষয়টা সত্যিই দৃষ্টিকটু বলে মনে হয়?
বিষয়টা জানলে, ব্যক্তিগতভাবে আমার একটু বোঝার সুবিধা হবে।
#
©️আমিনা তাবাস্সুম
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি