সিলেটে বর্ণাঢ্য আয়োজনে শেষ হলো দুইদিনব্যাপী ‘হাছন উৎসব–২০২৫’

প্রকাশিত: ৭:২৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৫

সিলেটে বর্ণাঢ্য আয়োজনে শেষ হলো দুইদিনব্যাপী ‘হাছন উৎসব–২০২৫’

Manual2 Ad Code
মানবতা, আধ্যাত্মিকতা ও মরমী দর্শনচর্চার আহ্বান

বিশেষ প্রতিনিধি | সিলেট, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ : মরমী সাধক, কবি ও দার্শনিক হাছন রাজার স্মরণে সিলেটে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দুইদিনব্যাপী ‘হাছন উৎসব–২০২৫’।

অহিংস, বুদ্ধিবৃত্তিক, মানবতা, আধ্যাত্মিকতা ও সুফিবাদ এবং মরমী দর্শনচর্চার ধারাকে এগিয়ে নিতে রবিবার (২১ ডিসেম্বর) ও সোমবার (২২ ডিসেম্বর) নগরীর চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় এ উৎসব।

বাংলার চিরায়ত সুফিবাদী লোকসংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের মাঝে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে হাছন রাজা লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় আয়োজিত এই উৎসবে ছিল আলোচনা সভা, আবৃত্তি, গবেষণা উপস্থাপন এবং হাছন রাজার গান পরিবেশনা।

উৎসবে হাছন রাজার জীবন, দর্শন, মানবতাবাদী চেতনা ও মরমী সাধনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। শীত ও কুয়াশায় আচ্ছন্ন নগরীর ব্যস্ততার মধ্যেও উৎসব প্রাঙ্গণে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

সমাপনী দিনে আলোচনা সভা

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) উৎসবের সমাপনী দিনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন হাছন রাজা লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম অচিনপুরী। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ (কেমুসাস)-এর সাধারণ সম্পাদক সেলিম আউয়াল, বাংলাদেশ বেতার সিলেট আঞ্চলিক কেন্দ্রের প্রধান আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তারেক, সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা জাসাসের সদস্য সচিব রায়হান হোসেন খান।
বক্তারা বলেন, হাছন রাজা মানবজীবনকে গভীর উপলব্ধি থেকে অনুধাবনের চেষ্টা করেছেন। তাঁর গান ও দর্শনের মূল সুর হচ্ছে মানবতা, আত্মশুদ্ধি ও মরমী সাধনা। সহজ-সরল ভাষায় রচিত তাঁর গানগুলোতে মানুষের অন্তর্লোক, আত্মজিজ্ঞাসা ও স্রষ্টার সঙ্গে সম্পর্কের গভীর দার্শনিক ভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে। হাছন রাজার গান মানুষের মনে আধ্যাত্মবোধ জাগ্রত করে এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে শান্তিময় ও মানবিক সমাজ গড়ার প্রেরণা দেয়।

গবেষণা ও বিভ্রান্তি দূর করার আহ্বান

আলোচনায় বক্তারা বলেন, হাছন রাজাকে নিয়ে সমাজে নানা বিভ্রান্তি বিদ্যমান। এসব বিভ্রান্তি দূর করতে হলে তাঁর জীবন ও দর্শন নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। হাছন রাজার চিন্তা ও দর্শন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে সাংগঠনিক উদ্যোগ জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তাঁরা। ভবিষ্যতেও হাছন উৎসব ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

Manual8 Ad Code

হাছন রত্ন ও সম্মাননা প্রদান

Manual6 Ad Code

উৎসবে লোকসাহিত্য ও গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ লেখক দেওয়ান সমসের রাজা চৌধুরী এবং হাছন গবেষক সামারীন দেওয়ানকে ‘হাছন রত্ন’ সম্মাননা প্রদান করা হয়। সামারীন দেওয়ানের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন সেলিম আউয়াল।

এছাড়া হাছন রাজা লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য ও পৃষ্ঠপোষকদের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মো. সোলেমান হোসেন চুন্নু, বিরহী কালা মিয়া, আবু সালেহ আহমদ, আসাদুজ্জামান নূর, সৈয়দ নিয়াজ আহমদ, সাখাওয়াত হোসেন পীর, সেলিম মিয়া, সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল হাসান ও নাহিদা আক্তার। পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে ছিলেন ডা. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম অচিনপুরী, মো. মোজাহিদ আলী, শামীম রেজা চৌধুরী ও সিরাজুল ইসলাম।

বিশিষ্টজনদের উপস্থিতি

উৎসবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট অনলাইন প্রেস ক্লাবের সভাপতি গুলজার আহমেদ হেলাল, হাছন রাজা লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক সোলেমান হোসেন চুন্নু, সিনিয়র সহ-সভাপতি বিরহী কালা মিয়া, সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান নূর, বিশিষ্ট সাংবাদিক এম এ হান্নানসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিক ও সুধীজন।

Manual8 Ad Code

উৎসব আয়োজনের পটভূমি

ডা. জহিরুল ইসলাম অচিনপুরী জানান, পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী শনিবার থেকে ‘হাছন রাজা লোক উৎসব–২০২৫’ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শহীদ ওসমান হাদীর মৃত্যু ও রাষ্ট্রীয় শোক দিবসের প্রতি সম্মান জানিয়ে উৎসবের সময়সূচি পরিবর্তন করে ২১ ডিসেম্বর থেকে আয়োজন করা হয়।

Manual5 Ad Code

দুইদিনব্যাপী এ উৎসব সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে হাছন রাজা চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ