প্রস্তাবিত বাজেট গতানুগতিক, ধনিক ও কালো টাকার মালিক ও আমলা তোষণের ধারাবাহিকতা মাত্র: বাসদ

প্রকাশিত: ৬:২৩ অপরাহ্ণ, জুন ৩, ২০২৫

প্রস্তাবিত বাজেট গতানুগতিক, ধনিক ও কালো টাকার মালিক ও আমলা তোষণের ধারাবাহিকতা মাত্র: বাসদ

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ০৩ জুন ২০২৫ : বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেছেন, “প্রস্তাবিত বাজেটে ২৪’র গণঅভ্যুত্থানের গণআকাংখার বৈষম্যেমুক্তির কোন প্রতিফলন নেই। বাজেট গতানুগতিক, ধনিক, কালো টাকার মালিক ও আমলা তোষণের ধারাবাহিকতা মাত্র।”

আজ মঙ্গলবার (৩ জুন ২০২৫) সংবাদপত্রে দেওয়া এক বিবৃতিতে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।

বিবৃতিতে কমরেড ফিরোজ বলেন, দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম ও শত শত মানুষের আত্মাহুতির মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের পলায়নের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে এটা প্রথম বাজেট। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেশের মানুষ এবারের বাজেটে তাদের আকাংখার প্রতিফলন দেখতে চেয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, নাগরিক সুবিধা, সুশাসন, ৪র্থ শিল্প বিপ্লব ও টেকসই উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করলেও বাজেটে তার কোন প্রতিফলন নেই। বাজেটে বেসামারিক-সামরিক আমলাখাত, সুদ পরিশোধ, প্রতিরক্ষা, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীসহ অনুৎপাদনশীল খাতে বেশীরভাগ টাকা বরাদ্দ অতীতের ফ্যাসিবাদী সরকারের ধারাবাহিকতা মাত্র। এখানে কোন নতুনত্ব বা পরিবর্তন নেই বরং জুলাই চেতনার পরিপন্থী। বাজেটের খাতওয়ারী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় বাজেট কমেছে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে, জাতীয় বাজেটের ১২% ও জিডিপির ২%। যা বিগত বাজেটের মতো একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। বরং শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির হিসাবে গতবারের তুলনায় কমে গেছে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ মূল্যস্ফীতি হিসাবে কমেছে এবং কৃষি খাতে বরাদ্দও গতবারের তুলনায় কমানো হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ খাতে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ কমানো হয়েছে যা উদ্বেগজনক।

বিবৃতিতে কমরেড ফিরোজ বলেন, বাজেটে শ্রমিক-কৃষকসহ সর্বধরণের মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার পরিবর্তে শ্রমিকের জন্য শ্রমিক কল্যাণ তহবিল ও কল্যাণ ফাউন্ডেশনে জমাকৃত টাকা উত্তোলনে ১০% কর আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত কোন শ্রমিক অসুস্থতাজনিত বা অন্য কারণে এই তহবিল থেকে ১ লাখ টাকা পেলে তার থেকে ১০ হাজার টাকা কেটে রাখা হবে। অথচ লুটেরা ও ধনিক গোষ্ঠীর কালো টাকা বা অপদর্শিত আয়কে সাদা করার সুযোগ এবারেও দেওয়া হয়েছে। যা ২৪’র গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী ও শত শত শ্রমিকের আত্মাহুতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। বেকার সমস্যা ও কর্মসংস্থানের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। এই বাজেটে উল্টো সাধারণ ও নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতে ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দও গত বারের তুলনায় কমেছে। যা সংকটকে আরও বৃদ্ধি করবে। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী ইতোমধ্যে ৩০ লাখ মানুষ নুতন করে অতিদরিদ্র হয়েছে। এ বিষয়েও সরকারের কোন পদক্ষেপ নেই।

বিবৃতিতে কমরেড ফিরোজ লুটেরা ও ধনিক শ্রণি, কালো টাকার মালিক ও আমলা তোষণের নীতির অতীতের গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪’র গণঅভ্যুত্থানের চেতনা এবং গণমানুষের গণআকাংখা অনুযায়ী শোষণ-বৈষম্যমুক্ত সমাজের লক্ষাভিমুখী জাতীয় বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্যে বাজেট সংশোধনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।