কমরেড ফজলে হোসেন বাদশার ৭৩তম জন্মবার্ষিকী কাল

প্রকাশিত: ১:১৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০২৫

কমরেড ফজলে হোসেন বাদশার ৭৩তম জন্মবার্ষিকী কাল

Manual3 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ১৪ অক্টোবর ২০২৫ : আগামীকাল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের সদস্য এবং দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বাম রাজনীতির অন্যতম দৃঢ় কণ্ঠস্বর কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা-র ৭৩তম জন্মবার্ষিকী। তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন, বরং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষার অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব।

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষাজীবন

রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ফজলে হোসেন বাদশা। ছোটবেলা থেকেই সমাজের বৈষম্য, অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী চেতনা তাঁর চিন্তায় প্রভাব ফেলে। রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর তিনি আইনজীবী পেশায় যুক্ত হন, কিন্তু তাঁর প্রকৃত জীবনের লক্ষ্য ছিল রাজনীতি—শোষিত মানুষের মুক্তির রাজনীতি।

বাম রাজনীতিতে প্রবেশ ও সংগঠন গড়ে তোলা

সত্তরের দশকে তিনি সক্রিয়ভাবে বামপন্থী রাজনীতিতে যুক্ত হন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিল বাস্তবতায় তিনি সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সাংগঠনিক পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮০–এর দশকে ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী জেলা কমিটির নেতৃত্বে থেকে তিনি শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনকে সাংগঠনিক রূপ দেন।

একই সঙ্গে ছাত্ররাজনীতির ধারায় গড়ে ওঠা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর মাধ্যমে তিনি তরুণ প্রজন্মকে বাম চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেন। পরবর্তীকালে জাতীয় পর্যায়ে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুক্ত হয়ে তিনি দলের নীতি ও কর্মসূচিকে গণমানুষের বাস্তব দাবির সঙ্গে যুক্ত করার কাজ করেন।

সংসদীয় রাজনীতিতে সমাজতান্ত্রিক দর্শনের প্রয়োগ

Manual2 Ad Code

ফজলে হোসেন বাদশা একাধিকবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন রাজশাহী–২ (রাজশাহী সদর) আসন থেকে। সংসদে তিনি শ্রমজীবী মানুষ, প্রান্তিক কৃষক, রেল শ্রমিক, তাঁতশিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন।
তিনি বারবার বলেছেন,
“গণতন্ত্রের অর্থ কেবল ভোট নয়—এটা অর্থনৈতিক সমতা, সামাজিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের জন্যও সংগ্রাম।”

তাঁর সংসদীয় বক্তৃতা ও অবস্থান সবসময় বাম রাজনীতির নীতিনিষ্ঠ ধারার প্রতিনিধিত্ব করে এসেছে।

বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য

বাদশা বিশ্বাস করেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মানে কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, বরং বৈষম্যহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। তিনি মনে করেন, “জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব” প্রতিষ্ঠাই হতে পারে এমন এক রাষ্ট্রব্যবস্থা, যেখানে শোষণহীন ও সমতার সমাজ গড়ে উঠবে।

দলীয় ও জাতীয় পরিমণ্ডলে ভূমিকা

Manual2 Ad Code

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি বাম ঐক্য জোরদার, প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা, এবং ডান ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
রাজনীতি ছাড়াও তিনি সংস্কৃতি আন্দোলনের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। রাজশাহীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে তাঁর অবদান প্রশংসিত।

সমসাময়িক রাজনৈতিক দর্শন

আজকের বৈশ্বিক ও জাতীয় অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে বাদশা মনে করেন—বিকল্প উন্নয়ন দর্শন ছাড়া টেকসই মুক্তি সম্ভব নয়। তাঁর ভাষায়,
“বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে জনগণের হাতে—কর্পোরেট পুঁজির হাতে নয়।”

Manual8 Ad Code

তিনি বিশ্বাস করেন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতার ভিত্তিতেই কেবল প্রকৃত উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।

সহযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা

তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান এক বিবৃতিতে বলেন,
“মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক ও জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠাসহ বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে কমরেড বাদশার সংগ্রাম আজও আমাদের প্রেরণা।”

তিনি কমরেড বাদশার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করেন।

Manual5 Ad Code

শেষকথা

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নীতিনিষ্ঠ, আদর্শিক ও সংগ্রামী নেতৃত্বের যে ঘাটতি আজ অনুভূত হচ্ছে, সেখানে কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এখনো এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। তাঁর রাজনৈতিক জীবন, নৈতিক দৃঢ়তা ও বাম আদর্শে অবিচল অবস্থান আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবে।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code