পোশাক শিল্পে কতজন শ্রমিক বেতন-বোনাস পেলেন? কতজন পেলেন না?

প্রকাশিত: ১০:০১ পূর্বাহ্ণ, মে ২৫, ২০২০

পোশাক শিল্পে কতজন শ্রমিক বেতন-বোনাস পেলেন? কতজন পেলেন না?

Manual4 Ad Code

ঢাকা, ২৫ মে ২০২০: ঈদের ছুটির আগে বেতন-বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ, ভাংচুরের মধ্য দিয়ে শেষ কয়েকটি দিন পার করেছেন তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা। তবু শেষ মুহূর্তে তাদের অনেককে খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হয়েছে।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠনের কাছে কতগুলো কারখানা বেতন-বোনাস পরিশোধ করেছে তার হিসাব থাকলেও কতজন শ্রমিক পেয়েছেন, আর কত জন বাদ পড়েছে তার হিসাব নেই।

বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ। আগের মাস থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে প্রভাবে ক্রমে ক্রমে সংকুচিত হতে শুরু করে পোশাক শিল্প।

Manual4 Ad Code

বিজিএমইএর হিসাবে, মার্চ পর্যন্ত সক্রিয় ২২৭৪টি সদস্য কারখানার মধ্যে ২১৮২টি কারখানার ২৪ লাখ ২৪ হাজার ৪১৭ জন শ্রমিক মার্চ মাসের বেতন পেয়েছিলেন। তবে এপ্রিলে সক্রিয় ছিল মাত্র ১৯২৬টি কারখানা। এর মধ্যে বেতন দিয়েছে ১৮৭৮টি কারখানা।

বিজিএমইএর জনসংযোগ সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান খান মনিরুল আলম শুভ বলেন, “এই মাসে আমরা কেবল কারখানার হিসাবগুলো নিয়েছি। কতজন শ্রমিক বেতন পেয়েছে সেটা আলাদাভাবে দেখা হয়নি এবার। গত দুইমাসে বিজিএমইএর সদস্যভূক্ত ৩৪৮টি সক্রিয় কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। (বিকেএমইএর বন্ধ হয়েছে ১৩০টি)।

“সক্রিয় ১৯২৬টি কারখানার মধ্যে ৪৮টি ছাড়া বাকিরা সবাই বেতন দিয়ে দিয়েছে। ১৮৭৮টি কারখানা বেতন দিয়েছে।“

মহামারীর কারণে পোশাক কারখানায় একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি পরিমাণ আর্থিক মূল্যের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। অনেক কারখানা বিদেশে পণ্য পাঠিয়েও ক্রেতার কাছ থেকে অর্থ পাননি বলে দাবি করছেন। এসব ঘটনার প্রভাব পড়েছে শ্রমিকের বেতন পরিশোধের ওপর।

তবে সরকার সক্রিয় কারখানাগুলোর শ্রমিকের বেতন পরিশোধে ইতোমধ্যে ২ শতাংশ সুদের প্রণোদনামূলক ঋণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। সেই অর্থ থেকেই এপ্রিলের বেতন পরিশোধ করেছে অধিকাংশ কারখানা।

Manual8 Ad Code

মনিরুল আলম বলেন, প্রণোদনা তহবিলের আবেদন করতে পেরেছে মাত্র ১৩৭৭টা কারখানা। এর মধ্যেও কিছু সংখ্যক কারখানা বিভিন্ন কারণে সেই ঋণ সুবিধা পায়নি। এর বাইরে ৫০০টি কারখানা আবেদনই করতে পারেনি। তারা নিজেরা ম্যানেজ করে বেতন দিয়েছে। বাকি ৪৮টি কারখানা তারা ঋণও পায়নি, টাকার ব্যবস্থাও করতে পারেনি।

“দুই মাসে ৩৪৮টি কারখানা বসে গিয়েছে। বাকি যারা আছে তারাও নানা সমস্যা আর টানাপোড়েনে ধুঁকছে। সুতরাং হুমকির মুখে পুরো পোশাক খাতই।”

পোশাক রপ্তানিকারকদের আরেকটি সমিতি বিকেএমইএর ক্ষেত্রে বেতন বোনাস পরিস্থিতি আরেকটু খারাপ।

বিকেএমইএর জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সক্রিয় কারখানা ছিল ৮৩৮টি। গত দুই মাসে বেতন বোনাস ও ক্রয়াদেশের ইস্যুতে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ১৩০টি কারখানা। বাকি যেগুলো চালু ছিল এর মধ্যে অধিকাংশই এপ্রিল মাসের বেতন পরিশোধ করতে পেরেছে।

Manual4 Ad Code

“শেষ দিনে আরও ৪/৫টি কারখানা বেতন পরিশোধের প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকের অসহযোগিতার কারণে তারাও পরিশোধ করতে পারেননি।

কতটি কারখানা বেতন পরিশোধ করেছে তার সঠিক হিসাব দিতে পারেনি বিকেএমইএ। সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা নিয়ে বেতন দিতে বিকেএমইএর ৫১৯টি কারখানা আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ঋণ পেয়েছে মাত্র ৪২০টি কারখানা। শর্তপূরণ করতে না পারার কারণে বাকি ৯৯টি কারখানার আবেদন বাতিল হয়েছে।

সারাদেশে লকডাউন পরিস্থিতির কারণে এপ্রিল মাসে অধিকাংশ কারখানায় বন্ধ রাখা হয়েছিল। যেসব কারখানা বন্ধ বা শ্রমিক অনুপস্থিত ছিল সেখানে এপ্রিল মাসের ৬৫ শতাংশ বেতন পরিশোধের কথা বলে দিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়।

বোনাস নিয়ে হাঙ্গামা

চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে শ্রমিকদের ঈদ বোনাস নিয়ে বৈঠক হয় শ্রম মন্ত্রণালয়। সেখানে টানাপড়েনে থাকা কারখানাগুলোকে বোনাস বাবদ প্রাপ্য অর্থের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করতে মৌখিক সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়, তবে তা মেনে নেননি বৈঠকে উপস্থিত শ্রমিক নেতারা।

Manual5 Ad Code

ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সভার এলাকায় দেখা দেয় শ্রমিক অসন্তোষ। পুলিশের সঙ্গে বেতন-বোনাসের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। অনেক স্থানে ভাংচুর করা হয় কারখানা।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতার বলেন, বোনাসের ৫০ শতাংশ দেওয়ার মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে যে প্রচার করা হচ্ছে সেটা সঠিক নয়। কিছু কিছু মালিক এমন দাবি উত্থাপন করার পর তার বিরোধিতা হয়েছে বৈঠকে।

“অনেকে চেয়েছিলেন আপাতত বোনাসের ৫০ শতাংশ দিতে। বাকি ৫০ শতাংশ আগামী ছয় মাসের মধ্যে দিতে। কিন্তু আগামী দুইমাস পরই তো আরেকটি ঈদ আসছে। তাহলে ছয়মাস পর তারা কীভাবে দেবে। বৈঠকে বিরোধীতার কারণে বোনাসের বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত হয়নি।”

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নিজের ইচ্ছে মতো বৈঠকের বরাত দিয়ে বোনাস সংক্রান্ত চিঠি মালিকদের কাছে দিয়েছে বলেও দাবি করেন বাবুল আখতার।

বেতনের বিষয়ে দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে তথ্য জানান হলেও বোনাস পরিশোধের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি। অধিকাংশ কারখানা বোনাস পরিশোধ করেছে বলে দাবি করছে বিজিএমইএর ও বিকেএমইএ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code