চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের কাছে তুলে দিলে বাংলাদেশকে ঝুঁকিতে ফেলবে: রতন

প্রকাশিত: ৮:৪১ অপরাহ্ণ, জুন ২১, ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের কাছে তুলে দিলে বাংলাদেশকে ঝুঁকিতে ফেলবে: রতন

নিজস্ব প্রতিবেদক | সিলেট, ২১ জুন ২০২৫ : ‘চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়া ও কথিত মানবিক করিডোর কার স্বার্থে?’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (২১ জুন ২০২৫) বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে চৌহাট্টাস্থ মুসলিম সাহিত্য সংসদের সেমিনার কক্ষে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বাসদ সিলেট জেলা আহ্বায়ক কমরেড আবু জাফরের সভাপতিত্বে ও জেলা সদস্য সচিব কমরেড প্রণব জ্যোতি পালের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সিলেটের প্রবীণ রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য, প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, সিপিবি’র জেলা সভাপতি কমরেড সৈয়দ ফরহাদ হোসেন, মহিলা আইনজীবী সমিতির বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দা শিরীন আখতার, জেলা বাসদের সাবেক আহ্বায়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড সিরাজ আহমদ, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ূন রশীদ শোয়েব, সাম্যবাদী আন্দোলনের অ্যাডভোকেট রণেন সরকার রনি, বাসদ (মার্ক্সবাদী) জেলা সমন্বয়ক কমরেড সঞ্জয় কান্ত দাশ, সাংস্কৃতিক সংগঠন ঊষা পরিচালক তমিশ্রা তিথি।

মতবিনিময় সভা লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাসদের সিলেট জেলা সদস্য কমরেড নাজিকুল ইসলাম রানা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন সিপিবির জেলা সাধারণ সম্পাদক কমরেড খায়রুল হাসান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অরুণ সরকার, সাবেক ব্যাংকার এম এ ওয়াদুদ, ক্রীড়া সংগঠক সাব্বির আহমদ, চা শ্রমিক ফেডারেশনের আহ্বায়ক বীরেন সিং, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের মুখলেছুর রহমান, সংগ্রাম পরিষদের জেলা সভাপতি শহীদ আহমদ প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান বলে বিবেচিত হওয়ায় এই অঞ্চলে পরাশক্তিগুলোর আধিপত্য কায়েমের একটি চেষ্টা দীর্ঘদিনের। যার দরুণ ১৯৯৮ সালে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের সময় চট্টগ্রাম বন্দর মার্কিন এসএসএ (স্টিভেডর সার্ভিসেস অফ আমেরিকা) নামক একটি ভুয়া কোম্পানির কাছে ১৯৮ বছরের জন্যে লিজ দেয়ার অপচেষ্টা শুরু হয়েছিল, যার ফলে বামপন্থীদের নেতৃত্বে ও সচেতন দেশবাসীর সহায়তায় আন্দোলন তীব্রতর হতে শুরু হয়। ২০০২ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে বন্দর অভিমুখে ঢাকা-চট্টগ্রাম লংমার্চ, ঘেরাও, হরতালসহ দেশে-বিদেশে বন্দর লিজের বিরুদ্ধে তীব্র জনরোষ এবং আদালতে ওই কোম্পানি ভুয়া বলে প্রমাণিত হওয়ার পর সরকার তা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।

কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, সম্পূর্ণ সক্ষম, স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং সবচেয়ে বৃহৎ ও লাভজনক হওয়ার পরেও নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশী কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে তুলে দেয়া কার স্বার্থে? এই ডিপি ওয়ার্ল্ডের সাথে আছে মার্কিন নৌবাহিনীর চুক্তি। এর মাধ্যমে পৃথিবীর যেখানেই ডিপি ওয়ার্ল্ড বন্দর ব্যবস্থাপনা করে সেখানেই মার্কিন নৌ, সামরিক জাহাজ ও সরঞ্জাম প্রবেশ করতে পারে। ফলে বিশ্বমানের ব্যবস্থাপনার নামে চট্টগ্রাম বন্দর যুদ্ধবাজ বিশ্ব মোড়লের অবাধ ব্যবহারের ব্যবস্থা হবার পথ উন্মুক্ত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে শুধু বন্দর ব্যবহারে জটিলতা বাড়াবে তাই নয় চীন-মায়ানমারসহ আঞ্চলিক খবরদারি এবং সমুদ্রের উপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কাজে এই বন্দর ব্যবহার হবার সম্ভাবনা একেবারেই অমূলক নয়। আর যদি তাই হয় তাহলে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে সামরিক ও রাজনৈতিক খবরদারির পথ উন্মুক্ত হবে। ফলে এই বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশ জড়িয়ে পড়তে পারে মার্কিন-চীন ও ভারতের আঞ্চলিক বিরোধে। মুনাফা করবে ডিপি ওয়ার্ল্ড আর নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়বে বাংলাদেশ।

কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, রাখাইনে মানবিক করিডোরের আড়ালে সামরিক করিডোর, স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেটের কথা বলে স্টার লিংকের অনুমোদন দেয়ার মাধ্যমে মার্কিন গোয়েন্দাগিরির পথ উন্মুক্ত করা, কাতার-তুরস্কের অস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরীর কারখানা করা সবই দেশকে বিপদের মধ্যে ফেলবে।

সভায় বক্তারা চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা, কথিত মানবিক করিডোরের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান এবং ২৭ ও ২৮ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড মার্চ সফল করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ