সিলেট ১১ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:১০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৪, ২০২০
সালেহ মিয়াজী || ঢাকা, ০৪ অাগস্ট ২০২০ : আগামী ৬ অাগস্ট দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার লড়াইয়ের মাঠে সাহসী যোদ্ধা, ‘৬০-এর দশকে স্বৈরাচার আয়ুব-ইয়াহিয়া বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ঐক্য ন্যাপ সভাপতি ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্যের ৮১তম জন্মবার্ষিকী। এ দিবসটি এবার করোনা মহামারীতে পালিত হবে নিতান্তই অনানুষ্ঠানিকভাবে।
আগামী ৬ অাগস্ট বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় সকল সহানুভূতিশীল বন্ধুদের ঢাকা শাহবাগস্থ বাংলাদেশ টেনিস কমপ্লেক্সে (রুম ১ পশ্চিম গ্যালারীর নিচে) সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কেন্দ্রীয় কার্যালয় উপস্থিত হওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার লড়াইয়ের মাঠে সাহসী যোদ্ধা, ‘৬০-এর দশকে স্বৈরাচার আয়ুব-ইয়াহিয়া বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ঐক্য ন্যাপ সভাপতি ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্যের ৮১তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ অামিরুজ্জামান বলেন, “ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের ঐতিহাসিক ভূমিকা আজও অম্লান। ১৯৩০ সালের চট্টগ্রাম বিদ্রোহের কথা স্মরণ করলে সবার মানসপটে ভেসে ওঠে রাউজান উপজেলার নয়াপাড়া গ্রাম। যে গ্রামে জন্ম নিয়েছেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের নায়ক মাস্টারদা সূর্যসেন। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে আলোকিত এই গ্রামেই এক ঐতিহাসিক ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেছেন গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রগতিশীল রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য।
বিপ্লব যুগে চট্টগ্রামে যুগান্তর ও অনুশীলন নামে ২টি দল সক্রিয় ছিল। চট্টগ্রামসহ সারা ভারতবর্ষে বিস্তৃত ছিল এ দু’টি দলের কার্যক্রম। পঙ্কজ ভট্টাচার্য শৈশবেই বিপ্লবী মাস্টার দা’র মানবমুক্তির দীক্ষায় প্রভাবিত হন। ফলে স্কুল জীবনেই জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। সেই রাজনীতির জীবন নিয়ে অদ্যবধি লড়ছেন বৈষম্যহীন ব্যবস্থার এক প্রত্যাশিত সমাজের পথরেখা বিনির্মাণে।
প্রগতিশীল ও ঐতিহ্যবাহী পরিবারই হলো পঙ্কজ ভট্টাচার্যের আজকের ভিত্তিভূমি। চট্টলার ব্রিটিশবিরোধী আপোসহীন লড়াকু মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, আব্দুস সাত্তার, অমল সেন, বিনোদ বিহারীসহ সময়ের অগ্রগামী ও মার্কসবাদী রাজনীতিকদের ছায়াতলে বেড়ে উঠেছেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। স্কুল জীবনে ভাল ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ফুটবল মাঠে সক্রিয় থাকা তাঁকে কৃতি খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত করেছে। তিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও ভূমিকা রেখেছেন।
নব্বইয়ের দশকে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর জনগণের আকাঙ্খার সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে, ব্যাপক জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্য সামনে রেখে ‘গণতান্ত্রিক ফোরাম’ নামে যে উদ্যোগ দানা বেধেছিল তা নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিল বাংলাদেশের নিরীহ কৃষক-শ্রমিক জনতাকে। পঙ্কজ ভট্টাচর্য সেই শক্তিকে সমুন্নত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছুটেছেন সংগঠিত করবার কাজে। ‘গণতান্ত্রিক ফোরাম’ থেকে ‘গণফোরাম’ গঠন করা কতটা ফলপ্রসু হয়েছে তার হিসাব-নিকাশ করবে ভবিষ্যৎ। কিন্তু আন্তরিকতার অভাব ছিল না তাঁর এই প্রয়াসে।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য ছিলেন ৬০’এর দশকের ছাত্র আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, তিনি স্বৈরাচার আইয়ুব-ইয়াহিয়া বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৬৩ সালে পালন করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতির দায়িত্ব। ১৯৬৪-১৯৬৫ ছাত্র ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ১৯৬৭ সালে আইয়ুব সরকার তাঁর বিরুদ্ধে ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলা’ দিয়ে তাঁকে কারাবন্দি করে।
১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগ দেন। ১৯৭০ সালে ন্যাপ কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন ও কমিউনিস্ট পার্টির সমন্বয়ে গঠিত গেরিলা বাহিনীকে সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেন। ১৯৭২ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত একই পদে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
এই সময়ে তিনি জিয়া-এরশাদ সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সংগঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৩ সালে ন্যাপের জাতীয় কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গড়ে উঠা ‘গণফোরাম’ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং গণফোরামের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। স্বৈরচারবিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন পর্যায়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তিনি কারা নির্যাতিত হন।
সময়ের প্রয়োজনে পঙ্কজ ভট্টাচার্য ১০ দল, ১১ দল, ১৪ দল, পিডিএফসহ বিভিন্ন প্লাটফর্ম গঠন করে মেহনতী মানুষের রাজনীতি ও তাদের অর্থনৈতিক মুক্তিসংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। রাজনীতিতে যখন কালোটাকা, পেশীশক্তি, অস্ত্রবাজ-সন্ত্রাসবাদ ও লুটেরা শ্রেণির দৌরাত্ম, দেশের সংখ্যালঘু-আদিবাসী, নিরীহ মানুষ যখনই নির্মম নির্যাতনের শিকার হন তখনই পঙ্কজ ভট্টাচার্য দেশের বিবেকবান শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি, পেশাজীবিদের সংগঠিত করে নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ান এবং প্রতিবাদ সংগঠিত করেন।
বিশেষ করে ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ও পরবর্তীতে বিএনপি-জামাত তথা চারদলীয় জোট সারাদেশের সংখ্যালঘু আদিবাসী ও নিরীহ মানুষের উপর জুলুম, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের যে তাÐব শুরু করেছিলো তার বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ সংগঠিত করতে পঙ্কজদা সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের ব্যানারে সারাদেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। প্রাণে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন ধর্ষিতা শিশু, বৃদ্ধা, মহিলাসহ নির্যাতিত মানুষদের। কিছু এলাকায় সমমনা বন্ধুদের নিয়ে পুনর্বাসনেও ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
৮১ বছরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে এখনও পঙ্কজদা তরুণ। তিনি এখনও বাংলাদেশের আদিবাসী সংখ্যালঘু নিরীহ জনতার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতীক। সারাদেশে যেখানে অন্যায়-নির্যাতন সেখানেই তিনি ছুটে যান-অসীম সাহসে। বর্তমানে তিনি ঐক্য ন্যাপের সভাপতি। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মদায়বদ্ধ সংগঠন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য।
বাংলাদেশের কেনা-বেচার রাজনীতিকে তাঁর সময়ের অনেকেই রং বদলে, দল বদলে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেছেন।
ভোগ-বিলাসে অনেক সম্পদ গড়ে তুলেছেন। অথচ পঙ্কজ ভট্টাচার্য মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পেয়েও রং ও লক্ষ্য কোনটিই বদলাননি। মেহনতি জনতার সরকার ও রাষ্ট্র গড়বেন এই স্বপ্নে তিনি মন্ত্রিত্বেও প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে তিনি জনতার কাতারে দাঁড়িয়ে সংগ্রাম করবেন, মুক্তির পথরেখা আঁকবেন এটিই তাঁর জীবনের প্রত্যয়। জয় হোক জনতার। জয়তু পঙ্কজদা।”
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D