সিলেট ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৩৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২, ২০২০
বিশেষ প্রতিনিধি || শ্রীমঙ্গল, ০২ অক্টোবর ২০২০ : “সংঘাত নয়, মানুষে মানুষে সম্প্রীতি ও হৃদ্যতা বৃদ্ধি করতে হবে।” আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস উপলক্ষে শ্রীমঙ্গলে অায়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম এ কথা বলেন।
অহিংস আন্দোলনের জনক মহাত্মা গান্ধীর জীবনী তুলে ধরে শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম অারও বলেন, “২০০৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে ভারতের আনীত প্রস্তাবে সর্বসম্মতিক্রমে মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিবস ২ অক্টোবরকে `আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তখন থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে।
কোন প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়ে ২ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস ঘোষণা করা হলো, তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায় যে, অহিংস আন্দোলনের প্রবক্তা ও ভারতের জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর জন্মদিনকেই অহিংস দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। ভারতের স্বাধীনতালাভের পর থেকেই ২ অক্টোবরকে শান্তি ও মানবতার প্রতীক হিসেবে মহাত্মা গান্ধীর জন্মোৎসব পালন করা হয়।
সর্বপ্রথম ২০০৪ সালে বোম্বেতে অনুষ্ঠিত ‘ওয়াল্ড সোসাল ফোরাম’ এ শান্তিতে নোবেল বিজয়ী শিরীন এবাদির কাছে ২ অক্টোবরকে অহিংস দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানান একজন শিক্ষক। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘সত্যগ্রহ কনফারেন্স’ থেকে সোনিয়া গান্ধী ও ডেসমন্ড টুটু জাতিসংঘের প্রতি গান্ধীর জন্মদিনকে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস ঘোষনার আহ্বান জানালে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সম্মতি সাপেক্ষে ২ অক্টোবরকে ‘আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।”
২ অক্টোবর শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় শ্রীমঙ্গল স্টেশন রোডস্থ ভানুগাছ সড়কের পেট্রোল পাম্প চত্বরে পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপ (পিএফজি)-এর উদ্যোগে ও পেভ-এর সহায়তায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
পিএফজি শ্রীমঙ্গলের কো-অডিনেটর ও সাংবাদিক সৈয়দ ছায়েদ আহমদের সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ অামিরুজ্জামান।
মানববন্ধনে অারও বক্তব্য দেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহর তরফদার, বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সায়েক আহমদ, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও পিএসজির অ্যাম্বাসেডর জহির আহমদ শামীম, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলার মীর এমএ সালাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সভাপতি দেওয়ান মাসুকুর রহমান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা জাসদের সভাপতি হাজী এলেমান কবির, ফারিয়ার সভাপতি দেবব্রত দত্ত হাবুল।
মানববন্ধনে অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ অামিরুজ্জামান বলেন, “মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে গান্ধীজীর অস্ত্র ছিল অসহযোগ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ। তিনি অহিংস ও সত্যাগ্রহ আন্দোলনের দ্বারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে পরাজিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
তাঁর বিভিন্ন আন্দোলনের ভিত্তি ছিল অহিংসা। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন, তাঁর আত্মত্যাগ, তাঁর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতি অঙ্গীকার এই যুগেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
তিনি বলে গেছেন, “Be the change you want to see in the world” অর্থাৎ আপনি নিজের সেই পরিবর্তন হোন যা আপনি সারাবিশ্বের সবার মধ্যে দেখতে চান।
অনেক মহান নেতা যেমন নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ও আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রথম প্রেসিডেন্ট আলবার্ট লুসিলি স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য তাদের আন্দোলনকে পরিচালনা করতে অহিংস দর্শন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
ইতিহাসের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রামের অগ্রণী ভূমিকায় অভিভূত হয়ে মহাত্মা গান্ধী লিখেছিলেন ‘Chittagong to the fore’ অর্থাৎ সবার আগে চট্টগ্রাম। গান্ধীজী দুইবার চট্টগ্রাম আগমন করেন–৩১ আগস্ট, ১৯২১ ও ১২ মে ১৯২৫ সালে।
গান্ধীজী নোয়াখালিতে এসে প্রায় চার মাস অবস্থান করেন। তিনি সেখানে অসংখ্য গ্রাম সফর করেন।
তাঁর উপস্থিতি, শান্তির প্রচেষ্টা এবং উভয় সম্প্রদায়ের জন্য তাঁর সম্প্রীতির বাণী বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিশাল প্রভাব ফেলেছিল। নোয়াখালীতে অবস্থিত গান্ধী আশ্রমের কথা সকলে অবশ্যই জেনে থাকবেন।
১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি দিল্লীতে আততায়ীর গুলিতে গান্ধীজি মৃত্যবরণ করেন। গান্ধীজীর মৃত্যুর পর বিশ্বখ্যাত বৈজ্ঞানিক অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, “Generations to come, it may well be, will scarce believe that such a man as this one ever in flesh and blood walked upon this Earth.”
গান্ধীজি অদ্বিতীয়, অপ্রতিরোধ্য এবং পথপ্রদর্শক। সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করার জন্য গান্ধীবাদি দর্শন আজকের দিনেও খুবই প্রাসঙ্গিক।”
এই মানববন্ধনে অারও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আসলাম খান, প্রবীণ নাগরিক অানহারুল ইসলাম, ফিরোজ মিয়া মেম্বার, দিবা রানী নাথ, শিক্ষক জাফরিন নাহার রোজ,
শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক মামুন আহমদ, জাতীয় পার্টির উপজেলা শাখার সাবেক যুগ্ন সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শহীদ, শ্রীমঙ্গল কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি দিলীপ কুমার কৈরী ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আসমা, লিপি বাউরী, সজীব অলমিক সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমান সময়ে গান্ধীজীর দর্শণের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি ধারণ করা হয়েছে যা নিম্নোক্ত ওয়েবসাইট ও অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে নিচে উল্লেখিত লিংক দু’টির মাধ্যমে উপভোগ করা যাবে।
Link 1: https://www.facebook.com/watch/?v=488531608798621
Link 2: https:// https://ahcichittagong.gov.in/
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D