আমরা নরাধম থাকব না তো কে থাকবে!

প্রকাশিত: ৩:১৫ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২০

আমরা নরাধম থাকব না তো কে থাকবে!

Manual2 Ad Code

|| অমিত কুমার কুণ্ডু || ২৩ জুন ২০২০ : বই পড়ার একটা সুবিধা হচ্ছে, লেখকের মনের ভাব জানতে পারা। একজন ভালো লেখক প্রচুর পঠন-পাঠন করেন। প্রচুর চিন্তা-ভাবনা করেন। তিনি তার অধ্যবসায়, চিন্তা-ভাবনা, বাস্তব অভিজ্ঞতা, নিজের দর্শনের মেল বন্ধন ঘটান তার বইতে। যখন বইটি পড়া হয়, তখন লেখকের বছরের পর বছর সাধনার ফসলটা স্বল্প আয়েশে পাওয়া যায়।

Manual8 Ad Code

ব্যাপারটা অনেকটা এমন, একজন ফল চাষি একটা ফলদ বৃক্ষর চারা লাগালেন, নিয়মিত পরিচর্যা করলেন, গাছটি ধীরে ধীরে বড় হলো, ফুল আসল, ফল আসল, ফল চাষি সেই ফুল ও ফলের পরিচর্যা করলেন, ঝড়-ঝঞ্ঝা, আপদ-বিপদ থেকে ফলকে রক্ষা করে সুমিষ্ট, সুপক্ক ফল বাজারে আনলেন বিক্রি করতে। আমরা বাজারে গিয়ে সামান্য অর্থ খরচ করেই ফলটা কিনে আনলাম। এরপর পরম তৃপ্তির সাথে সে ফলের স্বাদ আস্বাদন করলাম।

তেমনি, সামান্য টাকা দিয়ে আমরা এত এত মূল্যবান বই কিনতে পারি, যে বইটা লিখতে হয়তো সারাজীবন লেগে গেছে লেখকের; অথবা এমন বলা যায়, লেখকের জীবনভর সাধনার ফসল এই বইটি। এত স্বল্প আয়েশে, এত অল্প অর্থ খরচ করে, কখনোবা কোনও অর্থ খরচ না করেও বইটি আমরা পড়তে পারি, লেখকের জীবনবোধকে নিজের করে নিতে পারি। এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে?

ঋষির মতো তপস্যা করতে হচ্ছে না, যোদ্ধার মতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে না, চাষির মতো রোদেজলে ভিজতে হচ্ছে না, শুধু নিজের অবসর সময়ে বইয়ের পাতায় একটু চোখ বুলাতে হচ্ছে, সেটুকুও যদি আমরা করতে না পারি, তবে আমরা নরাধম থাকব না তো কে থাকবে!

আমার ভাবতে অবাক লাগে শুধু অর্থ উপার্জন করার জন্যই বেশিরভাগ লোক শিক্ষা গ্রহণ করে। হায়রে মূঢ়তা! যদি অর্থ রোজগারই মূখ্য হয়, তবে বিদ্যা অর্জন করার এত দরকার কী? পৃথিবীর তাবৎ ধনী, কোন রকম বিদ্যা অর্জন না করেই ধনী হয়েছেন। তাহলে জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করে লেখাপড়া করা কেন?

Manual3 Ad Code

লেখাপড়ার মূল উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জন। সত্যকে জানা, নিজেকে চেনা, বিচার করার শক্তি অর্জন করা, অন্যের মস্তিষ্ক দ্বারা পরিচালিত না হয়ে, নিজের মস্তিষ্ক দ্বারা পরিচালিত হবার কৌশল আয়ত্ত করা। সর্বোপরি নিজেকে মানুষ হিসেবে চিনতে শেখা।

আমার লজ্জা হয়, আমাদের চারপাশের অনেকে আছে, যাদের কেউ নারী, কেউ পুরুষ আবার কেউ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান অথবা বাঙালি বা আদিবাসী। মোদ্দাকথা আমি মানুষ, একথা বলার সাহস ক`জনের আছে? আমার ধর্ম মনুষ্যত্ব, আমার জাতীয়তা মানবতা এগুলো ক`জন বলতে পারে?

পারে না। কারণ মানুষ হবার চেয়ে কঠিন কিছু পৃথিবীতে নেই। মানুষ হবার চেয়ে মহৎ কিছুও পৃথিবীতে নেই। মানুষ হওয়া কতটা মূল্যবান এটা সহজেই বোঝা যাবে ধর্মগ্রন্থগুলো দেখলে। সেখানে দেখা যায়, স্বর্গের দেবতারাও মানুষ রূপে পৃথিবীতে আসার জন্য মুখিয়ে থাকেন। অর্থাৎ কিনা, দেবতারাও মানুষ হতে চায়!

Manual8 Ad Code

ভালো মানুষ বা মন্দ মানুষ বলে কিছু নেই। আছে দুটি কথা, এক-মানুষ, দুই-অমানুষ। যে মানুষ হতে পারে নি, সে অমানুষের কাতারেই পড়ে। মাঝামাঝি কোন অপশন নেই। কিছুটা ভালো, কিছুটা খারাপ বলে কোন কথা নেই। মনুষ্যোচিত গুণসম্পন্ন হওয়া বা এই মানুষ হবার প্রধান মাধ্যম ভালো বই পড়া। উদারতার বই পড়া। মানবিক বই পড়া।

প্রচুর বই পড়ার পরেও অনেকে মানুষ হতে পারে না।আবার কোন রকম বই না পড়েও অনেক মানুষ, মানুষ হয়েছে পূর্বে। তখন বই না পড়েও মানুষ হবার উপায় ছিল, কারণ তখন এমন অনেক মানুষ ছিলেন, যাঁরা এক একজন জীবন্ত লাইব্রেরি। এখন যে যুগ চলে গেছে। শিক্ষা গ্রহণ বা বই পড়তে শেখার শিক্ষাটুকু গ্রহণ, এখন আর কোন দুর্লভ বস্তু নয়।

বই পড়ার কৌশল শেখার পড়েও যারা ভালো বই পড়ে না, তারা নরাধম। তাদের জন্য করুণা। যেহেতু বই পড়া নিয়ে অনেক কথা হলো, সেহেতু একটা ভালো বইয়ের হদিস তো আপনাদের দিতেই হয়।

একটি বই পড়ছি, যা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে অনেকটা সাহায্য করবে। চিন্তার প্রসার ঘটাবে। সে বইটির নাম `টুকে রাখা কথামালা`। কথা সাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের লেখা টুকরো কথার অনন্য সম্ভার এ বইটি। তিনি বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সহজসরল ভাবে কিছু মতামত ব্যক্ত করেছেন। সেইসব চিন্তার সম্মেলন ঘটেছে এ বইটিতে। একটি জ্ঞান উদ্দীপক বই হিসেবে, চেতনার উন্মেষ ঘটাতে বইটি পড়া যেতে পারে।

Manual5 Ad Code

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code