করোনা মোকাবিলায় গাফিলতি ও পরিকল্পনাহীনতার খেসারত দিচ্ছে মানুষ

প্রকাশিত: ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ, জুন ৩০, ২০২০

করোনা মোকাবিলায় গাফিলতি ও পরিকল্পনাহীনতার খেসারত দিচ্ছে মানুষ

Manual2 Ad Code

ঢাকা, ৩০ জুন ২০২০: প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি এবং তাদের পরিকল্পনাহীনতার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বিশ্বের অন্য দেশে যেখানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমছে, বাংলাদেশে উল্টো বাড়ছে। জনপ্রতিনিধিরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছেন না। করোনা মোকাবিলায় দেশে ঐক্যবদ্ধ এবং সম্মিলিত কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে সংক্রমণের হারও কমছে না।

Manual8 Ad Code

সোমবার (২৯ জুন) কালের কণ্ঠ ও কেয়ার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘কভিড-১৯ জনিত আর্থসামাজিক ঝুঁকি থেকে উত্তরণ: অর্থায়ন ও নীতিকৌশল’ শিরোনামে অনলাইন সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

তারা বলেন, সরকার করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এক লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। কিন্তু এ টাকা কারা নজরদারি করবে, তার সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মপরিকল্পনা নেই। ফলে প্রণোদনার প্যাকেজ বাস্তবায়ন নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে এত বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কেন অনলাইনে ভ্যাট কার্যকর করা যায়নি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অর্থনীতিবিদরা। করোনার কারণে যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে, তাদের দ্রুত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করারও তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

Manual4 Ad Code

কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, নাহিম রাজ্জাক, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনসহ অন্যরা।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেয়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রমেশ সিং। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কেয়ার বাংলাদেশের পরিচালক আমানুর রহমান।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, ‘করোনা ভাইরাস সংক্রমণ কমানোর জন্য এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মপরিকল্পনা দেখতে পাচ্ছি না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে আমাদের সতর্ক করা হয়েছিল, কিন্তু আমরা ঠিক করতে পারিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা কোন হাসপাতালে হবে। সরকার যে লকডাউন ঘোষণা করেছে, সেটা লকডাউন ছিল না। সেটা ছিল সাধারণ ছুটি।’ জনপ্রতিনিধি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক শক্তিসহ সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া করোনা মোকাবিলা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন রাজশাহীর এ সংসদ সদস্য।

Manual4 Ad Code

নাহিম রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকিং খাতে সংস্কার জরুরি। সরকার এক লাখ কোটি টাকার বেশি ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কিন্তু এ টাকার নজরদারি কারা করবে, তার কোনো কর্মপরিকল্পনা নেই। করোনা মোকাবিলায় গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হবে। সেজন্য সরকার চারটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দুই হাজার কোটি টাকার আলাদা একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কিন্তু ওই টাকার নজরদারিও নিয়েও কোনো ব্যাখ্যা নেই। এসব বিষয়ে সরকারকে সুষ্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা দিতে হবে।’

Manual3 Ad Code

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, ‘বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার আজও হয়নি। দশ বছর ধরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভ্যাট অনলাইন প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ভ্যাট অনলাইন প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানোর কোনো বিকল্প নেই। কভিড ১৯ এর দুঃসময়ে অর্থনীতিতে যদি চাহিদা বাড়াতে হয়, তাহলে সবার হাতে টাকা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার এক লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এই প্যাকেজ আমাদের সাহস জুগিয়েছে। কিন্তু আমার সন্দেহ প্রণোদনার জন্য যেসব শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ব্যবসায়ীরা এ টাকা পাবেন কি না। শর্তগুলো শিথিল হওয়া জরুরি।’

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘কভিড ১৯ এর কারণে সারা বিশ্বেই যেখানে জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী। অথচ আমাদের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে উচ্চাভিলাষী, ৮ দশমিক ২ শতাংশ।’ সরকার কেন প্রবৃদ্ধির মোহে পড়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ফাহমিদা খাতুন। ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চাইলে যে হারে বিনিয়োগ হওয়া দরকার তা হবে না বলে জানান তিনি। কভিডের সময় সরকার রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, তা উচ্চাকাঙ্ক্ষী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘করোনা ভাইরাসে দেশের অর্থনীতি এলোমেলো হয়ে গেছে। রাজস্ব আয়, আমদানি, রপ্তানি, প্রবাসী আয়সহ অর্থনীতির সব সূচকই স্থবির। করোনার প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়ছে মানুষ। প্রতিদিন চাকরি হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। করোনার কারণে অনেক পেশা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। শহর ছেড়ে গ্রামমুখী মানুষের স্রোত বাড়ছে। সামাজিক অস্থিরতা ও পারিবারিক সহিংসতা বাড়ছে। নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে ১ কোটি ৬৩ লাখ মানুষ।’

স্বাগত বক্তব্যে কেয়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রমেশ সিং বলেন, ‘কভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকার এক লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। ৫০ লাখ পরিবারকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ঘোষণা সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে দীর্ঘমেয়াদে কভিড-১৯ মোকাবিলা করতে হলে সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণও বাড়াতে হবে।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code