ভ্যাট না বাড়িয়ে সরকারকে খরচ কমানোর পরামর্শ বিএনপির

প্রকাশিত: ৩:১০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫

ভ্যাট না বাড়িয়ে সরকারকে খরচ কমানোর পরামর্শ বিএনপির

Manual2 Ad Code

বিশেষ প্রতিবেদক | ঢাকা, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ : জনগণের উপর ভ্যাট না বাড়িয়ে সরকারের অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, পরিচালন ব্যয় এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোকে দেয়া ঋণ বাজেট কমানোর দিকে নজর দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।

আজ শনিবার (১৮ জানুয়ারি ২০২৫) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আরোপিত কর ও ভ্যাট জনগণের ভোগান্তি আরও বৃদ্ধি করবে’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

খরচ কমানোর দিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের সর্বপ্রথম নজর দেওয়া উচিত উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা মনে করি, সরকার তার উন্নয়ন বাজেট পুনর্বিবেচনা করে অপ্রয়োজনীয় ও আর্থিকভাবে অযৌক্তিক প্রকল্পগুলো বাদ দিলে প্রায় ২০ শতাংশ খরচ কমানো সম্ভব এবং এটি প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে সহায়ক হবে।

তিনি বলেন, পরিচালন ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকার যদি স্থানীয় সরকারের বাজেট এবং ভর্তুকি খাতে খরচ কমায় এবং সার্বিকভাবে পরিচালন ব্যয় ১০ শতাংশ কমাতে পারে, তাহলে ন্যূনতম ৫০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব। তাছাড়া, সরকার কর্তৃক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়া ঋণের বাজেট কমিয়ে সাময়িকভাবে ব্যয় সাশ্রয় করতে পারে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৫০,৮৭৫ কোটি টাকা ঋণ বাজেট করা হয়েছিল।

সরকার খরচ কমানোর মাধ্যমে বাজেটের ন্যূনতম ১ লাখ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারে এবং ঘাটতি কমাতে পারে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই পদক্ষেপগুলো দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি। সরকারের খরচ কমানোর এই উদ্যোগগুলো সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা কমাবে এবং অর্থনৈতিক চাপ লাঘব করবে। ফলে, জনগণ আর্থিকভাবে স্থিতিশীল হবে এবং দেশের সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটবে।

Manual6 Ad Code

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের এমন আকস্মিক সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ী মহলসহ আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট নানা মহলে তীব্র অসন্তোষ পরিলক্ষিত হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত স্পষ্ট প্রমাণ করে যে সরকারের মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের চরম ঘাটতি রয়েছে। যদিও এনবিআরের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, বর্ধিত করারোপ খাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নেই, তথাপি দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদেরা এনবিআরের এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাদের মতে, ওষুধ, এলপিজি, মোবাইল সেবা, রেস্তোরাঁর খাবার, এবং পোশাকের মতো নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রে করারোপ বৃদ্ধি পেলে জনজীবনে ভোগান্তি আরও ত্বরান্বিত হবে এবং মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন ঘটবে।

ভ্যাট ব্যবস্থার সমালোচনা করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, এমনিতেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। এই ভঙ্গুর অবস্থায় সহজ রাস্তায় হেঁটে ভ্যাটের হার তথা কর বাড়িয়ে সরকারের খরচ মেটানোর চেষ্টা করলে তা দেশের জনগণের জন্য কোনোভাবেই কল্যাণকর হবে না।

তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখা উচিত যে এই দেশের জনগণ আওয়ামী দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে অকাতরে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছে। আমরা যেন ভুল নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে তাদেরকে আবার সেই দুঃশাসনের মাঝে ফিরিয়ে না নিয়ে যাই।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা পূর্বেও বলেছি যে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতা করে যাব। তাই সরকারকে অনুরোধ করছি, আপনারা নীতিমালা প্রণয়নে জনগণের কথা সর্বপ্রথম বিবেচনায় নিন। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় রাজস্ব সংগ্রহের জন্য অন্যান্য উপায় বিবেচনা করার এবং সে অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

Manual7 Ad Code

সরকারকে পরোক্ষ কর না বাড়িয়ে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেবার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কারণ পরোক্ষ কর সকল শ্রেণীর মানুষকে প্রায় সমানভাবে প্রভাবিত করে এবং নিম্নবিত্ত মানুষের ওপর বোঝা বাড়ায়। প্রত্যক্ষ কর না বাড়িয়েও সরকারি খরচ কমিয়ে (কস্ট কাটিং) এবং চলতি বাজেটের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা পুনর্বিন্যাস করেও চলমান আর্থিক সমস্যার সমাধান করা যায়।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা তথা উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই ১০০টিরও বেশি পণ্যের ওপর ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে এবং কিছু পণ্যের কর অব্যাহতি তুলে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, পোশাক, ওষুধ এবং মোবাইল ইন্টারনেট সেবা। এই সিদ্ধান্তটি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে, বিশেষ করে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর ওপর নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলবে, চাপ বাড়াবে। সরকারের বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে তারা চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির প্রথম ধাপের ৪২ হাজার কোটি টাকা এবং পরবর্তী সম্ভাব্য ঘাটতি মেটাতে এবং কর-জিডিপি-অনুপাতের শর্ত পূরণ করে আইএমএফ-এর ঋণের জন্য এই ভ্যাট বাড়িয়েছে, কারণ বর্তমান রাজস্ব দিয়ে সরকার বাজেটের খরচ মেটাতে পারছে না। একইভাবে, কিছুদিন পূর্বে সরকার কিছু লুণ্ঠিত ব্যাংকের তারল্য সংকট মোকাবেলায় ২২,৫০০ কোটি টাকা ছাপিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা বুঝতে পারি যে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পরবর্তী সময়ে অন্যান্য খাতের মতো আর্থিক খাতেও বিশৃঙ্খলা ও ভঙ্গুর অবস্থা পরবর্তী চ্যালেঞ্জগুলো সৃষ্টি করেছে। তথাপি, বিএনপি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ জনগণের জীবনের ওপর প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছর দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে কার্যত ধ্বংস করে ফেলেছে।

Manual5 Ad Code

ডিসেম্বর ২০২৪ এর তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছে, দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ, অনেক ক্ষেত্রে এটি ২৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। অথচ দক্ষিণ এশিয়া বিশেষত শ্রীলংকার মত দেশে মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। দেশের মোট ঋণের পরিমাণ ২০ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে এবং ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকটের কারণে জনগণ তাদের কষ্টার্জিত আমানত ফেরত পাচ্ছে না। দেশের অর্থনীতি কার্যত ভেঙে পড়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাস্তবতায় দেশের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক ও গতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া অবশ্যই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের শাসন ব্যবস্থায় যেই থাকুক না কেন, তাকেই সেই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে এবং যোগ্যতা ও সাহসের সাথে তা মোকাবেলা করতে হবে। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই চ্যালেঞ্জগুলোকে কার্যকর উপায়ে মোকাবেলা না করে এবং একটি অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের ভিত্তি তৈরির দিকে মনোযোগ না দিয়ে চলতি অর্থ বছরের মাঝপথে হঠাৎ করে ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধি করল, যা সহজ কিন্তু জনগণের জন্য কল্যাণকর নয়।

Manual8 Ad Code

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইসমাইল জাবিউল্লাহ, চেয়ারপার্সনের মিডিয়া ইউং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code