বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের ফাঁসি কার্যকর

প্রকাশিত: ১০:২১ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২০

বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের ফাঁসি কার্যকর

Manual6 Ad Code

আদর্শ বার্তা ডেস্ক :
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শনিবার রাত বারোটার পর মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
এর আগে শনিবার দিনের বেলায় মঞ্চ প্রস্তুত করে ফাঁসির ট্রায়াল হয় কেন্দ্রীয় কারাগারে। এরই ধারাবাহিকতায় রাত বারোটার পর বঙ্গবন্ধুর এই আত্মস্বীকৃত খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন এই মাজেদ। তখন তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন।

দুই দশকের বেশি সময় ধরে পলাতক থাকা মাজেদের বিষয়ে গত ৭ এপ্রিল এক ভিডিও বার্তায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন: বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী আবদুল মাজেদকে গত মঙ্গলবার ভোর তিনটার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর এলাকা থেকে আটক করে। এরপর তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ‘প্রডিউস’ করা হলে আদালত মাজেদকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন এবং পরে তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেয় হয়।

এরপর ৮ এপ্রিল মাজেদকে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করার পর ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরী খুনি মাজেদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। পরবর্তিতে লাল সালু কাপড়ে মুড়া মৃত্যু পরোয়ানা পৌঁছে যায় কারাগারে এবং কারা কর্তৃপক্ষ পরোয়ানা পড়ে শোনান মাজেদকে।

Manual4 Ad Code

এরপর ফাঁসির দড়ি এড়ানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে বুধবার প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন মাজেদ। কিন্তু রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রাণভিক্ষার সে আবেদন নাকচ করে দিলে মাজেদের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কারাগারে মাজেদের সঙ্গে দেখা করেন তার স্ত্রী সালেহা বেগম, স্ত্রীর বোন ও বোন জামাই, ভাতিজা ও একজন চাচাশ্বশুর সহ মোট ৫ জন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের ক্ষেত্রে পদে পদে বাধা আসে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই জারি করা হয় দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) অধ্যাদেশ। তবে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম ধানমন্ডি থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন।

Manual6 Ad Code

এরপর ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। সেই রায়ে আবদুল মাজেদসহ ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

Manual7 Ad Code

বিচারিক আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট দ্বিধাবিভক্ত রায় দেন। এরপর ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল ও তিনজনকে খালাস দিয়ে রায় দেন।

পরবর্তিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে পাঁচ আসামি আপিল করেন। কিন্তু এরপর প্রায় ছয় বছর এই আপিল শুনানি না হওয়ায় আটকে থাকে বিচারপ্রক্রিয়া। এরপর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাটি আবার গতি পায়। ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির লিভ টু আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন এবং ২০০৯ সালের অক্টোবরে আপিল শুনানি শুরু হয়। এরপর ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পাঁচ আসামির আপিল খারিজ করেন। এরফলে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে হাইকোর্টের দেওয়া ১২ খুনির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে।

তবে পরবর্তিতে এই ১২ খুনির মধ্যে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পাঁচ জন রিভিউ আবেদন করেন। তবে সেই রিভিউ খারিজ করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আর ওই রিভিউ খারিজের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়।

Manual2 Ad Code

এরপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনির মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন (আর্টিলারি) এর ফাঁসি ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি কার্যকর হয়।

আর এদের ফাঁসি কার্যকরের আগেই পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আজিজ পাশা।

অন্যদিকে আজ মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর এখন বিভিন্ন দেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত আরও যে পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হওয়া বাকি রইলো। তারা হলেন: খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এরা সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code