প্রাচীন স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন জানু মিয়া জামে মসজিদ

প্রকাশিত: ৯:০২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১২, ২০২২

প্রাচীন স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন জানু মিয়া জামে মসজিদ

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | কুমিল্লা (দক্ষিণ), ১২ আগস্ট ২০২২ : নগরীর মুরাদপুরে দাঁড়িয়ে আছে ১৭৩ বছরের সাক্ষী হয়ে। ১৮৪৯ সালে নির্মিত প্রচীন স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন ‘জানু মিয়া জামে মসজিদ’। এটি প্রাচীন কারুশিল্পের মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের ধারক ও বাহক ইসলামী ঐতিহ্য, কালের সাক্ষী হয়ে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে আজও।
তিন গম্বুজ বিশিষ্ট ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি জানু মিয়া মসজিদ নামে পরিচিত হলেও এর প্রতিষ্ঠাতা তাঁর দাদা খান বাহাদুর আশরাফ আলী। তিনি এই এলাকার জমিদার ছিলেন। তিনি ১৮৪৯ সালে ‘আশরাফিয়া জামে মসজিদ’ নামে এটি নির্মাণ করেন। পরিবর্তিতে পর্যায়ক্রমে মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে থাকলে ১৯৯০ সালে এটি সম্প্রাসারণ করা হয়। ৭ হাজার বর্গফুটের মসজিদটি সম্প্রসারণের পর এখন এর আয়তন ১০ হাজার বর্গফুট। মসজিদটি খান বাহাদুর আশরাফ আলী প্রতিষ্ঠা করলেও তার নাতী প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ এবং কবি কাজী নজরুল ইসলামের সহচর জানে আলম চৌধুরী (জানু মিয়া) এর নামে কালের আবর্তনে পরিচিত পেয়ে যায়। তার শিল্পী সত্ত্বার ফলেই এমনটি হয়েছে বলে মনে করেন মসজিদটির বর্তমান মোতয়াল্লী প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরী।
এ প্রসঙ্গে প্রফেসর আলী চৌধুরী বলেন, ১৮৪৯ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন খান বাহাদুল আশরাফ আলী। এই প্রতিষ্ঠার পিছনে অনেক ইতিহাস আছে। তৎকালীন সময়ে দিল্লী থেকে কারিগর এনে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিলো। মসজিদের ভেতরে যত নকশা রয়েছে সবগুলো দিল্লির কারিগররাই করেছেন। পরবর্তীতে তাঁর পুত্র আরবে রহমান মোতয়াল্লী হন। তিনি যতদিন জীবত ছিলেন ততোদিন তার নামে মসজিদটিকে বলা হতো। তার মৃত্যুর পর আরবে রহমানের পুত্র জানু মিয়া মোতয়াল্লী হলে পরে জানু মিয়া মসজিদ নামকরণ হয় এবং এটাই শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে যায়। জানু মিয়ার শিল্প সাহিত্যর কারণে এটা স্থায়ী হয়। জানু মিয়ার সান্নিধ্য লাভ করেছেন জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম। গান বাজনা করেছেন। দুই দুইবার কবি নজরুল ইসলাম এসেছেন এই বাড়িতে। পরবর্তীতে এটা একটা পরিচিতি লাভ করেছে এবং এভাবেই চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদটির ভিতরে ফার্সী ভাষায় কষ্টিপাথর দিয়ে প্রতিষ্ঠাতার নাম ও সন লিপিবদ্ধ রয়েছে। মসজিদটির ভিতরের টেরাকোটার অসাধারণ কারুকার্য এখনও পর্যন্ত সজ্জিত রয়েছে। পুরো মসজিদটি চুন আর পাথর দিয়ে নির্মিত। তৎকালীন যুগে প্রতিষ্ঠিত এই অপূর্ব মসজিদটির কারুকার্য এখনও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। মসজিদটির মেহেরাব অন্যান্য মসজিদ থেকে অনেক ভিন্ন। অন্যান্য মসজিদের মেহেরাব মসজিদের বাহিরের দিকে অথচ এই মসজিদের মেহেরাব মসজিদের ভিতরের দিকে আর মসজিদের দেয়াল ৫৬ ইঞ্চি প্রস্থ যার কারণে মসজিদের মেহেরাব ভিতরের দিকে আছে। মসজিদটি ১০ হাজার বর্গফুটের এ মসজিদটির রয়েছে ৩টি গম্বুজ, ৪টি মিনার ও ৩৬ ধরনের নকশা। মসজিদটিতে একসাথে ২ হাজার ৫শ’ মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। এখানে নামাজ পড়ে অন্য রকম প্রশান্তি পান মুসল্লীরা।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, জানে আলম ছিলেন তৎকালীন সময়ের একনিষ্ঠ সংগীত-সাধক। মসজিদের পাশে রয়েছে জানে আলমের বাসভবন। উপমহাদেশের অনেক প্রখ্যাত সংগীত শিল্পীর মধ্যে কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শচীন দেববর্মণ সহ উপমহাদেশের খ্যাতনামা ব্যাক্তিবর্গরা ও তার সান্নিধ্যে বাসভবনে গানের আসর জমিয়েছেন। যার কারণে উক্ত স্থানে বিভিন্ন মানুষের আনাগোনা ছিল। যে জন্য ‘আশরাফিয়া জামে মসজিদ’ জানু মিয়া মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ