নন্দলাল

প্রকাশিত: ১০:২০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২

নন্দলাল

Manual6 Ad Code

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় |

নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ-
স্বদেশের তরে, যা করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
সকলে বলিল, ‘আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল’?
নন্দ বলিল, ‘বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?’
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা বাহবা বেশ!’

Manual6 Ad Code

নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তাহারে কেবা!
সকলে বলিল, ‘যাও না নন্দ, করো না ভায়ের সেবা।’
নন্দ বলিল, ‘ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারি দিক্।’
তখন সকলে বলিল- ‘হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক!’

নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির,
গালি দিয়া সবে গদ্যে পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির;
পড়িলো ধন্য দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন;
লেখে যতো তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশ গুণ;
খাইতে ধরিল লুচি ও ছোকা ও সন্দেশ থাল থাল,
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল।’

নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি;
সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি;
নন্দ বলিল, “আ-হা-হা ! কর কি, কর কি ! ছাড় না ছাই,
কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই?
বলো ক’বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা”
তখন সকলে বলিল- “বাহবা বাহবা বাহবা বাহা!”

নন্দ বাড়ির হ’ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি;
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি,
নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে ‘কলিশন’ হয়;
হাঁটিতে সর্প, কুক্কুর আর গাড়ি-চাপা-পড়া ভয়,
তাই শুয়ে শুয়ে, কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল
সকলে বলিল- ‘ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।’
.#

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

Manual6 Ad Code

বাঙালি কবি, নাট্যকার ও সংগীতস্রষ্টা। তিনি ডি. এল. রায় নামেও পরিচিত। তিনি প্রায় ৫০০ গান রচনা করেন। এই গানগুলি বাংলা সংগীত জগতে দ্বিজেন্দ্রগীতি নামে পরিচিত। তার বিখ্যাত গান “ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা”, “বঙ্গ আমার! জননী আমার! ধাত্রী আমার! আমার দেশ” ইত্যাদি আজও সমান জনপ্রিয়। তিনি অনেকগুলি নাটক রচনা করেন। তার নাটকগুলি চার শ্রেণিতে বিন্যস্ত: প্রহসন, কাব্যনাট্য, ঐতিহাসিক নাটক ও সামাজিক নাটক। তার রচিত কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে জীবদ্দশায় প্রকাশিত আর্যগাথা (১ম ও ২য় ভাগ) ও মন্দ্র বিখ্যাত। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বিখ্যাত নাটকগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য একঘরে, কল্কি-অবতার, বিরহ, সীতা, তারাবাঈ, দুর্গাদাস, রাণা প্রতাপসিংহ, মেবার-পতন, নূরজাহান, সাজাহান, চন্দ্রগুপ্ত, সিংহল-বিজয় ইত্যাদি।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্ম অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। তার পিতা কার্তিকেয়চন্দ্র রায় (১৮২০-৮৫) ছিলেন কৃষ্ণনগর রাজবংশের দেওয়ান। সে বাড়িতে বহু গুণীজনের সমাবেশ হত। কার্তিকেয়চন্দ্র নিজেও ছিলেন একজন বিশিষ্ট খেয়াল গায়ক ও সাহিত্যিক। এই বিদগ্ধ পরিবেশ বালক দ্বিজেন্দ্রলালের প্রতিভার বিকাশে বিশেষ সহায়ক হয়। তার মা প্রসন্নময়ী দেবী ছিলেন অদ্বৈত আচার্যের বংশধর। দ্বিজেন্দ্রলালের দুই দাদা রাজেন্দ্রলাল ও হরেন্দ্রলাল এবং এক বৌদি মোহিনী দেবীও ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যস্রষ্টা।

দ্বিজেন্দ্রলাল ১৮৭৮-এ প্রবেশিকা পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন। এফ. এ. পাস করেন কৃষ্ণনগর গভঃ কলেজ থেকে। পরে হুগলি কলেজ থেকে বি.এ. এবং ১৮৮৪ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে এম.এ. পাস করেন।এরপর কিছুদিন ছাপরার রেভেলগঞ্জ মুখার্জ্জি সেমিনারিতে শিক্ষকতা করার পর সরকারি বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ডে যান কৃষিবিদ্যা শিক্ষা করার জন্য। রয়্যাল এগ্রিকালচারাল কলেজ ও এগ্রিকালচারাল সোসাইটি হতে কৃষিবিদ্যায় FRAS এবং MRAC ও MRAS ডিগ্রি অর্জন করেন। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন ১৮৮৬ সালে প্রকাশিত হয় তার একমাত্র ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ Lyrics of Ind। এই বছরই দেশে প্রত্যাবর্তন করে সরকারি কর্মে নিযুক্ত হন দ্বিজেন্দ্রলাল। কিন্তু তিন বছর বিদেশে থাকার পর দেশে ফিরে প্রায়শ্চিত্ত করতে অসম্মত হলে তাকে নানা সামাজিক উৎপীড়ন সহ্য করতে হয় সংস্কারাচ্ছন্ন হিন্দু সমাজ দ্বারা।

Manual3 Ad Code

ভারতবর্ষে ফিরে তিনি জরিপ ও কর মূল্যায়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং মধ্যপ্রদেশে সরকারি দপ্তরে যোগ দেন। পরে তিনি দিনাজপুরে সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ পান। তিনি প্রখ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক আন্দুলিয়া নিবাসী প্রতাপচন্দ্র মজুমদারের কন্যা সুরবালা দেবীকে বিবাহ করেন ১৮৮৭ সালে। ১৮৯০ সালে বর্ধমান এস্টেটের সুজামুতা পরগনায় সেটেলমেন্ট অফিসার হিসাবে কর্মরত অবস্থায় কৃষকদের অধিকার বিষয়ে তার সাথে বাংলার ইংরেজ গভর্নরের বিবাদ ঘটে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি ১৯১৩ সালে সরকারি চাকরি হতে অবসর নেন।

Manual6 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ