এই ডিজিকে বরখাস্ত করতে হবে

প্রকাশিত: ৫:১৮ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২০

এই ডিজিকে বরখাস্ত করতে হবে

Manual4 Ad Code

ফজলুল বারী, সিডনি (অস্ট্রেলিয়া), ১৮ জুন ২০২০ : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি আবুল কালাম আজাদ রাজাকারের নাতি এ নিয়ে অনলাইন এক্টিভিস্টরা বেশ কিছুদিন ধরে নানা কথা বলে আসছেন। এ নিয়ে আমি মাথা না ঘামিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম মহামারীর এই সময়ের প্রয়োজনে লোকটি কাজের কিনা!

অতঃপর ডিজি নিজেই প্রমান দিয়ে বললেন তিনি আসলে কোন কাজের নন। বরঞ্চ একটা অকম্মার ঢেঁকি! আরও ভালো করলে বললে গাড়ল! দেশের মানুষের মধ্যে হতাশা ছড়ানো অথবা অন্ধকার দেখানোর জন্যে তাকে নিশ্চয় বেতন দেয়া হয়না।

দেশে করোনা আরও দুই তিন বছর থাকতে পারে এমন ভবিষ্যদ্বানী বা বানী দিতে গেলেও এর সঙ্গে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তের উল্লেখ থাকতে হবে। কিন্তু তিনি তা করেননি। এমন খেলো কার্যক্রম কী এই সময়ে ডিজির মানায়?

অতএব তাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে। নতুবা বের করে দিতে হবে গলাধাক্কা দিয়ে। কারন বাংলাদেশের এখন কোন গাড়ল-ফাড়ল পোষার সামর্থ্য নেই। দরকারও নেই। বৃহস্পতিবার তিনি আকস্মিক উদ্দেশ্যমূলক বানী প্রসব করেছেন!

তার বানীর সারবত্তা আগামী দুই তিন বছর বাংলাদেশের সামনে অন্ধকার থাকবে! ডিজির এই বক্তব্যে চমকে উঠেছে দেশ। ঢাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেলো এটি ডিজির উর্বর মস্তিস্ক প্রসূত বানী!

এর সঙ্গে জাতীয় কভিড নাইনটিন কমিটির কোন সম্পর্ক নেই। করোনা পরিস্থিতির খোঁজ নিতে আমি বিভিন্ন দেশের মিডিয়ার অনলাইলে ঘুরে বেড়াই সারাদিন। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাজ কর্ম দেখি।

বাংলাদেশের কিছু লোকজনের কাজকর্ম দেখে আপনার ধারনা হবে এই মহামারীর সময়েও এদের হাতে কোন কাজ নেই! তাদের অফুরন্ত সময়! এরজন্যে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা বাইরে কাটান বেশি!

বাইরে মানে তাকে যে উদ্দেশে চেয়ারে রেখে বেতন দেয়া হয় তার কাজ বাদ দিয়ে এদের কয়েকজনকে দেখবেন নানা টেলিভিশনে ‘গুরুত্বপূর্ন মতামত দিচ্ছেন’! এক টিভি শেষে আরেক টিভিতে! কারন তিনি এখন করোনা মহাতারকা।

এই মহামারীর শুরু থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষনা প্রতিষ্ঠান( আইইডিসিআর) এ ব্যাপারে নিয়মিত ব্রিফিঙ করে আসছে।

অধ্যাপিকা মীরজাদি সাব্রিনা ফ্লোরা শুরু থেকে এই ব্রিফিঙটি ভালোই করছিলেন।
কিন্তু তখনও সবাই দেখতেন চেহারা দেখাতে এই ডিজি লোকটি বেহায়ার মতো ওই টেবিলের এক প্রান্তে বসে থাকতেন! যেন চেহারা দেখা না গেলে তিনি কোন কাজ করছেননা এই বিবেচনায় সরকার তাঁকে এই মাসে বেতন দেবেনা!

মাঝে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরক্তিকর ব্রিফিঙও সবাইকে সহ্য করতে হয়েছে। অধ্যাপিকা সাব্রিনা অথবা নাসিমা সুলতানার আগেপরে অখাদ্য অপ্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীরও চেহারা দেখানো চাই!

অথবা ডিজির কিছু একটা বানী দিতেই হবে বা চেহারা দেখাতেই হবে! এই মহামারীর সময়েও অধিদপ্তরটিতে নানা গ্রুপিং-ল্যাং মারামারি থেমে নেই! অধ্যাপিকা সাব্রিনাকে ব্রিফিং থেকে সরিয়ে দেবার পর নাসিমা সুলতানার ব্রিফিঙও ভালো হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সেখানে চেহারা দেখাতে গিয়ে ডিজির বানী বৃত্তান্ত নিয়ে গোয়েন্দা তদন্ত হওয়া দরকার। করোনা বাংলাদেশে আরও দুই তিন বছর থাকতে পারে এই পীরাকি অথবা বানী দেবার অথরিটি তাকে কে দিয়েছে?

যেখানে জাতীয় কভিড নাইন্টিন কমিটি বলছে তারা এ ধরনের কোন মতামত সরকার বা মন্ত্রণালয়কে দেননি। তাহলে এমন একটি ঘোষনার মাধ্যমে ভীতি ছড়ানোয় ডিজির মোটিভ কী?

মাস্ক সহ কোন একটি কেলেংকারির যদি তিনি একটা বিহিত করতে পারতেন! সৃষ্ট পরিস্থিতির কারনে সরকার জীবন-জীবিকার কথা বলে নানাকিছু খুলে দিলেও নানান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে।

Manual1 Ad Code

এখন ডিজির এই বানীকে আমলে নিয়ে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ কী আগামী দুই-তিন বছর বন্ধ রাখতে হবে? ডিজির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলেছে সাম্প্রতিক অসুস্থতার সময়েই তার মাথায় নতুন এই তত্ত্বের সূত্রপাত।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি সিএমএইচ’এ চিকিৎসাধীন ছিলেন ডিজি। ওই সময়ে তিনি নাকি প্রচুর পড়েছেন। নানা দেশের নিউজ এটা সেটা পড়ে তাঁর ধারনা হয় আগামী দুই-তিন বছরতো এই রোগ যাবেনা!

কাজেই তার মতে এই রোগ নিয়ে এখন এত হৈচৈ করার কী আছে! এরপর থেকে তিনি ঘনিষ্ঠদের দুই তিন বছর মেয়াদী কর্ম পরিকল্পনা নেবার কথা বলতে শুরু করেন।

মহামারীর সময়ে দুনিয়া জুড়ে সবাই যেখানে আজকের পরিস্থিতি আজকে সামাল দেয়া নিয়ে ব্যস্ত সেখানে ডিজি আছেন দুই তিন বছরের চিন্তায়! বৃহস্পতিবারের ফাউল টকের পর ডিজির নানা কর্মকান্ড নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন।

বাংলাদেশের করোনা টেস্ট নিয়ে শুরু থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রহস্য ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়। কারন শুরু থেকে ইনি সরকারকে বোঝাতে শুরু করেন টেস্ট কম করতে হবে বা কম দেখাতে হবে!

কী কারনে তার এই তত্ত্ব এর এখনও কোন উত্তর নেই। কারন তখন বিলগেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিস্তর টেস্ট কিটসও চলে এসেছিল।

আইইডিসিআর’এর পাশের প্রতিষ্ঠানও তখন টেস্ট করার অনুমতি পায়নি!
সেই গবেষনা প্রতিষ্ঠানের কাছে সেই সব টেস্ট কিটস এসে পড়ে থাকলেও তাদের পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হচ্ছিলোনা। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহ সবাই তখন টেস্ট বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আসছে।

Manual6 Ad Code

শুরু থেকে যথাযথ টেস্ট না হওয়ায় আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন পন্ডিতও নিশ্চিত করে বলতে পারছেননা বাংলাদেশে আসলে সংক্রমনের চূড়া সময় কোনটি?

কেউ কেউ বলেছিলেন মে-জুন, এখন আবার বলা হচ্ছে নভে্ম্বর!

শুরুর দিকে শর্ত ছিল শুধু আইইডিসিআর করবে করোনা টেস্ট বা পরীক্ষা! এরপর বলা হলো অমুক অমুক পরীক্ষা করতে পারলেও ফলাফল দিতে পারবেনা! ফলাফল দেবার একমাত্র অথরিটি থাকবে আইইডিসিআর!

এমন নানা সময়ে নানান জটিলতায় টেস্টকে বিলম্বিত অথবা বিঘ্নিত করা হয়েছে! আর এখন সারা দেশজুড়ে টেস্ট নিয়ে অরাজকতার বিষয়গুলো শুধু ওয়াকিফহালরাই জানেন। কেউ চাইলেই টেস্ট করাতে পারছেননা।

অনেকে একটা টেস্ট আর নেগেটিভ সার্টিফিকেটের অভাবে চাকরিতে যোগ দিতে পারছেননা। আগে বাংলাদেশে চাকরির জন্যে ভর্তির জন্যে তদবির হতো। এখন করোনা টেস্টের সুযোগ করে দিতেও তদবির চলে!

Manual4 Ad Code

প্রভাবশালীদের কাছে প্রতিদিন এমন বিস্তর ফোন আসে, ভাই একটি টেস্ট করিয়ে দেবেন?

ঈদে ঘরে ফেরার ট্রেনের টিকেটের জন্যে আগে কমলাপুর স্টেশনে মানুষের অপেক্ষার রাত কাটতো।
এখন করোনা টেস্টের জন্যে রাত কাটে রাস্তায়! টেস্ট করাতে গিয়ে অনেক সুস্থ ভালো লোকও আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছেন! এরজন্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই ডিজিকে কী কখনও জবাবদিহির চেষ্টা করা হয়েছে?

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে সংক্রমন লাখ ছাড়ানোর পর অনেকে হায় হায় করা শুরু করেছেন! এই সংক্রমন বৃ্দ্ধিতে গত ঈদে বাড়ি যাওয়া আসার একটি প্রভাব আছে। ঈদ কিন্তু আরেকটা আসছে সামনে বাংলাদেশ!

কুরবানির ঈদ। জান কুরবানি হয়ে যাবে। তবু ওই ঈদেও বাড়ি যাওয়া লাগবেই লাগবে। তখন আবার কুরবানির গরুর হাটও থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরুর বাজারের কথা বলা হবে। কিন্তু কেউ তা মানবেনা।

এই পরিস্থিতিতে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই নাগরিকদের এবার হজে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ভয়ে সে কথা মুখেই আনতে পারেনি। সেই অবস্থায় এলো অন্ধকার ভবিষ্যতের হুশিয়ারি!

দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি বলছেন, আরও দুই-তিন বছর থাকবে এই করোনা পরিস্থিতি!

তাই যদি হয় এভাবে দেশের নানা অংশ লকডাউন নিয়ে প্রশ্ন উঠবেনাতো! কে দেবে উত্তর? ডিজি না সরকার?

এই অকর্মাকে বরখাস্ত করতে হবে।

Manual8 Ad Code

ফজলুল বারী

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code