কৃষিতে সিআইপির আদলে এআইপি সম্মাননা পেয়ে অভিভূত ২২ গুণী ব্যক্তি

প্রকাশিত: ৩:৩৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ৭, ২০২৪

কৃষিতে সিআইপির আদলে এআইপি সম্মাননা পেয়ে অভিভূত ২২ গুণী ব্যক্তি

বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ০৭ জুলাই ২০২৪ : ‘কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি)’-২০২১ সম্মাননা পেয়েছেন ২২জন। কৃষিকাজ করে সিআইপির আদলে এরকম জাতীয় স্বীকৃতি পাওয়ায় অভিভূত হয়েছেন সম্মাননা প্রাপ্তগণ।

আজ রোববার (৭ জুলাই ২০২৪) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সম্মাননা দেন।

বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরী।

এআইপিপ্রাপ্ত গুণী ব্যক্তিদের ‘ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ’ উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এমন ত্যাগী ব্যক্তিদের অবদানে আমাদের কৃষি এগিয়ে চলেছে। কৃষকের সামাজিক সুনাম ও সম্মান বাড়ানোর জন্যই এআইপি সম্মাননা। এআইপি সম্মাননা তাঁদেরকে কৃষিকাজে আরো উৎসাহিত করবে এবং কৃষির চলমান অগ্রযাত্রাকে বেগবান করবে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের কৃষকের কল্যাণ ও কৃষির উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। বৈশ্বিক নানা সংকটের কারণে বাজেট বরাদ্দ প্রদানে যত সমস্যাই থাকুক না কেন, সবসময়ই প্রধানমন্ত্রী কৃষিতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছেন। কৃষিকে সামনে এগিয়ে নিতে তিনি সবসময় বাজেটে কৃষিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, বিশাল পরিমাণ ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে কৃষিকাজের জন্য তাগিদ দেন এবং তিনি নিজেও গণভবনে কৃষিকাজ করেন। এই সরকার কৃষিকে প্রাধান্য দিয়েই দেশ পরিচালনা করছে।

কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, এআইপি নীতিমালা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৪৫ জন ব্যক্তিকে এক বছর মেয়াদের জন্য এআইপি হিসেবে নির্বাচন করার সুযোগ রয়েছে। নীতিমালাতে উল্লিখিত শর্তসমূহ পূরণ সাপেক্ষে চারটি পর্যায়ে নিবিড় যাচাই বাছাই এর মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে ২২ জনকে এবার এআইপি সম্মাননা দেয়া হয়েছে।

২০১৯ সালে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। তার আলোকে ২০২০ সাল থেকে দেয়া হচ্ছে এ সম্মাননা। সেবছর এআইপি পেয়েছিলেন ১৩জন। এআইপি সম্মাননা প্রাপ্তগণ সিআইপিদের মতো সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।

চার দশকের বেশি সময় কৃষি নিয়ে কাজ করার স্বীকৃতিস্বরূপ এআইপি সম্মাননাপ্রাপ্ত বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাইখ সিরাজ অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, আজ এই এআইপি পুরস্কার পেয়ে আমি অনেক আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রীর কৃষি বিষয়ে আগ্রহের কথা উল্লেখ করে শাইখ সিরাজ বলেন, কৃষির প্রতি শেখ হাসিনার গভীর আগ্রহ ও ভালোবাসা রয়েছে। তিনি প্রতি ইঞ্চি জমি ব্যবহারের কথা শুধু বলেই ক্ষান্ত হননি, নিজ আঙ্গিনায় কৃষিকাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজ চাষী শাহিদা বেগম এআইপি সম্মাননা পেয়ে বলেন, কৃষিকাজে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করি। তিনি কৃষিকে অনেক সম্মানের জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন। এআইপি সম্মাননার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সারে ভুর্তকির কারণে অল্প দামে সার ক্রয় করতে পারছি এবং কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা সবসময় পাচ্ছি।

যারা পেলেন সম্মাননা

কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাইখ সিরাজ, পরিবেশ বিষয়ক সংগঠক হিসেবে চট্টগ্রামভিত্তিক সংগঠন ‘তিলোত্তমার’ প্রতিষ্ঠাতা সাহেলা আবেদীন ও সমবায় উদ্যোক্তা হিসেবে সাতক্ষীরার ‘ধানদিয়া সিআইজি মহিলা সমবায় সমিতির’ সভাপতি শিখা রানী চক্রবর্তী এপিআই সম্মাননা পেয়েছেন।

জাত বা প্রযুক্তি উদ্ভাবন শ্রেণিতে এসিআই অ্যাগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট এ কে এম ফারায়েজুল হক আনসারী, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিষমুক্ত নিরাপদ সবজির কৃষি উদ্যোক্তা এম এ মতিন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য চুয়াডাঙ্গার ‘জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ স্বত্বাধিকারী মো. ওলি উল্লাহ এবং জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাশ সম্মাননা পেয়েছেন।

কৃষি উৎপাদন, বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প শ্রেণিতে ১০ জন এআইপি হয়েছেন।

উন্নতজাতের ফলচাষের জন্য টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মো. ছানোয়ার হোসেন, পেঁয়াজ বীজ চাষের জন্য ফরিদপুরের খান বীজ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শাহীদা বেগম, সাথী ফসল উৎপাদন করে জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য খুলনার ডুমুরিয়ার কৃষি উদ্যোক্তা সুরেশ্বর মল্লিক, ফলচাষের জন্য চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের ‘গ্রিন প্ল্যানেট অ্যাগ্রোর’ স্বত্বাধিকারী মো. রুহুল আমীন, জলাবদ্ধতা নিরসণে কাজ করায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার অ্যাগ্রো বেইজড ‘সোশিও ইকোনমিক্যাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেসের’ চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন, দুগ্ধ উৎপাদনে পাবনার ঈশ্বরদীর ‘তন্ময় ডেইরি খামারের’ স্বত্বাধিকারী মো. আমিরুল ইসলাম এ সম্মান পেয়েছেন।

এছাড়া মাছ চাষে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ‘আল বারাকা মৎস্য খামার অ্যান্ড হ্যাচারির’ স্বত্বাধিকারী মাছুদুল হক চৌধুরী, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মৌচাষী কৃষি উদ্যোক্তা মো. রফিকুল ইসলাম, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ফলচাষী ‘সিরাজ বহুমুখী খামারের’ স্বত্বাধিকারী মো. সিরাজুল ইসলাম ও শেরপুর সদর উপজেলার ফলচাষী ‘মা-বাবার দোয়া ফ্রুট গার্ডেন নার্সারি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মের’ স্বত্বাধিকারী মো. হযরত আলী এআইপি হয়েছেন।

রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদন শ্রেণিতে দুজন এআইপি নির্বাচিত হয়েছেন।

তারা হলেন- বৃক্ষরোপণ ও বনসাই নার্সারীর জন্য গাজীপুর সদর উপজেলার ‘লিভিং আর্ট গার্ডেনের’ পরিচালক কে এম সবুজ ও বারোমাসি আম চাষি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মোহা. রফিকুল ইসলাম।

বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শ্রেণিতে তিনজনকে এআইপি নির্বাচন করা হয়েছে।

জৈবসার ও কেঁচো সার উৎপাদক নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ‘অন্নপূর্ণা অ্যাগ্রো সার্ভিসের’ স্বত্বাধিকারী রাম নিবাস আগরওয়ালা, বাণিজ্যিক কৃষি খামারি হিসেবে ঢাকার নবাবগঞ্জের ‘অমিত ডেইরি ফার্মের’ স্বত্বাধিকারী মায়া রানী বাউল ও সফল বীজ উৎপাদকারী পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মো. আবদুল খালেক এআইপি সম্মাননা পেয়েছেন।

এআইপিরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পাবেন

এআইপি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বছর মোট পাঁচটি বিভাগে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। এআইপি কার্ডের মেয়াদকাল এক বছর। এআইপি স্বীকৃতিপ্রাপ্তরা সিআইপিদের মত সুযোগসুবিধা পান।

এর মধ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয়ের প্রশংসাপত্র, বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য পাস, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ; বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে ভ্রমণে সরকার পরিচালিত গণপরিবহনে আসন সংরক্ষণ অগ্রাধিকার; নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার এবং বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার সুবিধা।