বাঁশখালী সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশ

প্রকাশিত: ১২:২৮ অপরাহ্ণ, মে ৪, ২০২১

বাঁশখালী সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশ

ঢাকা, ০৪ মে ২০২১ : চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিকদের সঙ্গে ১৭ এপ্রিল পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে আপাতত ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।এই ঘটনায় বিচারিক তদন্তের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

পৃথক রিটের শুনানি নিয়ে আজ বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীর সমন্বয়ে গঠিত একটি ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
রুলে ১৭ এপ্রিলের এই সংঘর্ষে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৭ শ্রমিক নিহত এবং প্রায় ৩০ জন আহত হওয়ার ঘটনায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে এবং হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের পরবর্তী নিরাপত্তা সুরক্ষা নিশ্চিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা-ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের আদেশে এই ঘটনায় পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন ৪৫ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও চিকিৎসার খরচের বিষয়ে এস আলম গ্রুপ কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে ৪৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওখানকার শ্রমিক ও এলাকাবাসীকে যাতে কোনো ধরনের হয়রানি না করা হয়, তা নিশ্চিত করতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি প্রত্যেক নিহত শ্রমিকের পরিবারকে তিন কোটি ও আহত শ্রমিকদের দুই কোটি টাকা করে যৌথভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না-এ বিষয়েও রুল জারি করেছেন আদালত।
বাশখালী উপজেলার গন্ডামারায় নির্মাণাধীন কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তালিকা তৈরিসহ প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে বিচারিক অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) গত মাসে একটি রিট করে। অন্যদিকে একই ঘটনায় ২৮ এপ্রিল অপর রিটটি করে পাঁচ সংগঠন।
সংগঠনগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), নিজেরা করি, সেফটি অ্যান্ড রাইটস ও অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)।
আদালতে পৃথক রিটের পক্ষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সৈয়দা নাসরিন শুনানি করেন।
এস আলম গ্রুপের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আরশাদুর রউফ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল অরবিন্দু কুমার রায় ও বিপুল বাগমার।
গত ১৭ এপ্রিল সকালে বাঁশখালীর গন্ডামারায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিকদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হন। পরে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজন মারা যান। আহত হন ৩ পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন।
৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, পবিত্র রমজান মাসে কর্মঘণ্টা ১০ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা, শুক্রবার ৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৪ ঘণ্টা করাসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজের শ্রমিকেরা। বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন কিছু শ্রমিক। তখনই পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকে।
বাঁশখালী সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে এস আলম গ্রুপের মালিকানায় এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট নামে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। চীনা প্রতিষ্ঠান সেফকো থ্রি পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এখানে অর্থায়ন করেছে। এখানে প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করেন।
হতাহতের ঘটনায় এসএম পাওয়ার প্লান্টের পক্ষে একটি ও পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলাটি করেছে। ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে করা মামলায় ২২ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাত আরও ১০৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর পুলিশের করা মামলায় অজ্ঞাত দুই থেকে আড়াই হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগেও ২০১৬ সালের এপ্রিলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের পক্ষে ও বিপক্ষে থাকাদের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়। আর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বিষয়ে মতবিনিময় সভা চলাকালে সংঘর্ষে একজন নিহত হন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ