কেরালায় আবার লাল ঝাণ্ডার বিজয়: প্রথা ভেঙে ফের ক্ষমতায় বামপন্থীরা

প্রকাশিত: ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ, মে ১১, ২০২১

কেরালায় আবার লাল ঝাণ্ডার বিজয়: প্রথা ভেঙে ফের ক্ষমতায় বামপন্থীরা

Manual6 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি | কেরালা (ভারত), ১১ মে ২০২১ : দীর্ঘদিনের প্রথা ভেঙে আবারো কেরালায় লাল ঝাণ্ডা উড়ালো বামপন্থীরা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিধান সভা নির্বাচনে সিপিআই(এম)-এর নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোটের (এলডিএফ) ওপরেই আস্থা জানালেন কেরালাবাসী। কেবল ক্ষমতায়’ই ফেরেনি, বামফ্রন্ট গত বারের চেয়েও বেশি আসন পেয়েছে। অন্যদিকে কেরালার মানুষ আরএসএস-বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক বিষ প্রচারকে প্রত্যাখ্যান করে বিধান সভায় তাদের ঢোকার পথই বন্ধ করে দিয়েছেন। বিজেপি শূন্য বিধান সভা গঠন করছে এলডিএফ জোট। নির্বাচনে ১৪০ আসনের মধ্যে এলডিএফ ৯৯ আসনে জয়ী হয়েছেন। ৪১ আসন নিয়ে বিধান সভায় বিরোধী আসনে বসছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ জোট। এলডিএফ-এর এ বিজয় কে জনতার ঐতিহাসিক বিজয় বলে আখ্যায়িত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী সিপিআই(এম) নেতা পিনারাই বিজয়নক।

Manual7 Ad Code

জানাগেছে ১৯৮০ সালের পর এ রাজ্যে কখনোই একই রাজনৈতিক শক্তি পরপর দু’বার ক্ষমতায় আসে নি। প্রতি ৫ বছরেই সরকার বদল হয়েছে। এই প্রথম বার বামফ্রন্ট সেই প্রথা ভেঙে নজিরবিহীন রেকর্ড গড়েছেন। কেবল বিজয়ী’ই হয় নি, গত নির্বাচনের চেয়ে অনেক বেশি আসন পেয়েছে। জোটের প্রধান শরীক সিপিআই(এম) একাই পেয়েছে ৬২ আসন। আর সিপিআই(এম) সমর্থিত নির্দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে ৫ জন বিজয়ী হয়েছেন। ফলে বিধান সভায় সরকার গড়তে প্রয়োজনীয় ৭১ আসনের খুব কাছাকাছি আসন পেয়েছে সিপিআই(এম)। বামফ্রন্টের ১৫ জন মহিলা প্রার্থীর মধ্যে ১০ জনই জয়ী হয়েছেন। ৫০ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেকে শৈলজা বিজয়ী হয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি ভোটে। নির্বাচনে বিজেপি রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রন দুই কেন্দ্রেই পরাজিত হয়েছেন। কেরালার রাজধানীর তিরুবনন্তপুরম দক্ষিণপন্থীদের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। কিন্তু এবার বিধান সভা নির্বাচনে এ জেলার সব কেন্দ্রে জয়ী হয়েছে বামফ্রন্ট। টাকা, ক্ষমতা আর আরএসএস-বিজেপি’র গেরুয়া বাহিনী অনেক লম্ফঝম্ফ করেও কোনো কাজ হয় নি। কেরালায় একেবারে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে।
বিজয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন আরো বলেছেন,“ রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশ দূষিত করার চেষ্টা চলেছে। একের পর এক আক্রমণের মুখে পড়েছে রাজ্য। মোকাবেলা করতে হয়েছে বিবিধ সঙ্কট। তারপরেও এ রাজ্যের মানুষ তাদের ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। এ বিজয় জনতার।”
বিজয়ী সরকারের অর্থমন্ত্রী সিপিআই(এম) নেতা টমাস আইজ্যাক বলেছেন, বিজেপি গতবার খাতা খুলেছিল, এবার আমরা বাদ করে দিলাম। কেরালা ধর্মনিরপেক্ষতার গড় হয়েই থাকবে।”
কেরালায় বামপন্থীদের এই ঐতিহাসিক বিজয়ের কারণ কী তা বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকরা বলছেন,“ নানা বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে বেনজির গণউদ্যোগ তৈরি করে সর্বশক্তি নিয়ে রাজ্যবাসীর পাশে দাঁড়ানো, সর্বস্তরের মানুষের স্বার্থে শক্ত হাতে রাজ্য প্রশাসনের কল্যাণমূলক প্রকল্প পরিচালনা, বিরোধী দলগুলোর কুৎসিত বিভেদকামী প্রচার রুখে আদর্শভিত্তিক অবস্থানগত পদক্ষেপের কারণে সমীকরণ মেলাতে মানুষ এলডিএফ’কে বেছে নিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন,“ ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে পরপর ভয়াল বন্যা ও ভূমিধসে সর্বগ্রাসী সেই দুর্যোগ সামলে ক্ষতিগ্রস্ত সব মানুষের জন্য ফের জীবিকা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা এবং একই সঙ্গে রাজ্যের অর্থনীতি চাঙ্গা করে তোলার কাজটি মোটেও ছিল না। যা বামফ্রন্ট করে দেখিয়েছে।”
সর্বোপরি বামপন্থী সরকার ও বামপন্থী নিরলস লড়াইয়ে জেগে উঠেছে কেরালা। সেই জাগরণে আবারো কেরালায় উড়লো লাল ঝাণ্ডা।

দীর্ঘদিনের প্রথা ভেঙে আবারো কেরালায় লাল ঝাণ্ডা উড়ানোর ঐতিহাসিক বিজয়ী সিপিআই(এম)-এর নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোটের (এলডিএফ)-এর নেতা কমরেড পিনারাই বিজয়নকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান।

Manual7 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code